পরিহারপূর্বক যে, সর্বদাই অমৃত বাক্য প্রয়োগ করে তাহাও আমাদিগের দোষ। যেহেতু আপনারা ক্ষমাবান হইলে কাহার মিথ্যা বলিয়া প্রতারণা করিবার প্রয়োজন থাকে না। সে যাহাহউক, সামন্তু এইরূপ স্থির করিয়া দুর্ভাগ্য বাহকবর্গকে রজ্জুবদ্ধ করিয়া লইল, এবং যেখানে দিল্লীশ্বর আরবে মাদুরা নগর সন্নিধালে শিবির সংস্থাপন করিয়া পরম প্রিয়তমা আত্মজার আগমন প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, তথায় শীঘ্র গমনে উপনীত হইলেন। বাদশাহ স্বীয় দুহিতা সম্বন্ধীয় দুর্ঘটন ঘটনা শ্রবণমাত্র যে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন, সৈন্যগণের অনেক নিগ্রহ করিলেন, এবং দুরদৃষ্ট বাহকেরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলিয়াই যে শীঘ্র দাণ্ডার্হ হইল, তাহা বলা বাহুল্য।
এখানে শিবিকাপহারীরা বাদসাহ-পুত্রীর শিবিকা বহন করত নানা কুটিল পদবী উত্তীর্ণ হইয়া একটা পৰ্বতীর দুর্গসমীপে উপনীত হইল। তখন রাত্রি অধিক হইয়াছিল, কিন্তু সেই স্থান পর্বতের অধিত্যকা, অতএব তারা এবং চন্দ্র কিরণে উপত্যকা অপেক্ষা শিথিলান্ধকার ছিল। তথায় কোন বিশেষ সঙ্কেত করিবামাত্র দুর্গস্থিত ব্যক্তিরা উৰ্দ্ধ হইতে একটা দোলাযন্ত্র অবতারিত করিয়া দিল। নৃপাল-তনয়া বহুবিধ সম্মানপুরঃসপ্প তাহার উপর আরোহণ করিতে আদিষ্ট হইলে তিনি অগত্যা শিবিকা ত্যাগ করিয়া ঐ দোলাযন্ত্র অবলম্বন করত চক্ষুঃ মুদ্রিত করিয়া রহিলেন। দোলা যন্ত্র নারিকেলত্বঙ নির্ম্মিত কঠিন রজ্জু-সংযোগে নির্বিঘ্নে শূন্যমার্গে উত্থিত হইল। এইরূপে ক্রমে ক্রমে সকলে ঐ দুল দুর্গ প্রান্তে উত্তীর্ণ হইলে, দুর্গের কবাট উন্মুক্ত হইল, তখন সকলেই তাহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করিল।
বাদসাহ কন্যার আবাস হেতু ঐ দুর্গমধ্যে যে গৃহটী প্রস্তুত হইয়াছিল তাহা প্রদর্শিত হইলে তিনি তাহাতে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, দিল্লীর রাজ-ভবনে যাদৃশ মহামূল্য গৃহোপকরণ শোভাসামগ্রী পরিবৃত হইয়া থাকিতেন এখানে তার কিছুই নাই। কিন্তু প্রয়োজনীয় কোন দ্রব্যেরও অসম্ভব ছিল না। রাজভবনে হেমপাত্র পরিপূর্ণ আতর গোলাপ মৃগনাভি প্রভৃতি সুগন্ধি দ্রব্য সকল গৃহ অমোদিত করিত, এখানে অগুরু চন্দন ও অকৃত্রিম স্নিগ্ধ সুগন্ধি পুষ্পাদি তাঁহার সেবার্থে সমাহত হইয়াছিল। পিত্রালয়ে কাশ্মীর দেশ প্রসূত সালের শয্যায় উপবিষ্ট হইতেন, এখানে সুকোমল রোমশ পঞ্চ