চর্ম্মে আসন প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু সেখানে অন্তঃপুর রক্ষিগণ সর্ব্বদা নিষ্কোষ কৃপাণ হস্তে পরিভ্রমণ করিত, এখানে তাদৃশ কিছুই দৃষ্ট হইল না।
তৎকালে বাদসাহ-পুত্রীর বয়ঃক্রম সপ্তদশ বর্ষমাত্র হইয়াছিল। তাঁহাকে যদিও প্রধানাসুন্দরীদিগের মধ্যে গণ্য করিতে না পারা যায়, তথাপি অবশ্যই প্রশংসনীয়রূপা বলিতে হয়। স্ত্রীলােকেরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একটী একটী করিয়া বিবেচনা করিলে রােসিনার কোন কোন অবয়বেয় কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ দোষ নির্ব্বাচন করিতে পারিতেন, কিন্তু সদা সুস্থশরীর এবং আনন্দ-যুক্ত অন্তঃকরণ থাকিলে মুখমণ্ডলের যাদৃশ মনােহারিত হয়, নৃপদুহিতা সেই শােভাতেই জনগণের কমনীয়া ছিলেন। পিতৃ-শত্রুর কবলিত হওয়াতেও তাঁহার সেই সৌন্দর্যের কিছু বৈলক্ষণ্য হয় নাই। তিনি মনে মনে জানিতেন পিতা সকল সন্তান অপেক্ষা তাহার প্রতি অধিকতর স্নেহ করেন, অতএব অচিরাৎ তাহার উদ্ধারার্থ যত্ন করিবেন, তাহার সন্দেহ নাই; এবং প্রবল প্রতাপ আরঞ্জেব যত্ন করিলে কৃতকার্য্য হইবার অসম্ভাবনা কি? এই ভাবিয়া রােসিনারা নিশ্চিন্ত-প্রায় ছিলেন। বরং মধ্যে মধ্যে এমনও মনে করিতেছিলেন, এই দুর্ব্বোধ দস্যুরা পিতার সন্নিধানে বিপুল অর্থ পাইবার লোভেই আমার শরীর আয়ত্ত করিয়াছে, কিন্তু ইহাদিগের অর্থ লাভ হওয়া দুরে থাকুক, জাত ক্রোধ বাদসাহের সমক্ষে প্রাণ রক্ষা হওয়াও ভার হইবে—আমি সেই সময়ে তাঁহার ক্রোধোপশমের নিমিত্ত যত্ন করিয়া ইহাদিগের মহাসম্ভ্রম সূচক ব্যবহারের প্রত্যুপকার প্রদান করিব। এই রূপে রােসিনারা অনুদ্বিগ্ন-মনা হইয়া কিঞ্চিৎ উপযােগানন্তর রাত্রি যাপন করিলেন।
পর দিবস প্রত্যুষে গাত্রোত্থান করিয়া স্বীয় আবাস গৃহ দর্শনার্থ ভ্রমণ করিতেছেন, ইতিমধ্যে দেখিতে পাইলেন, একস্থানে অতি স্পষ্টাক্ষরে লিখিত ফর্দ্দৌসি, হাফেজ, সেখ সাদি প্রভৃতি মহা কবিগণের পারস্য ভাষায় বিরচিত রমণীয় কাব্য গ্রন্থ সকল সংস্থাপিত রহিয়াছে। রােসিনার বাল্যাবস্থায় স্বজাতীয় ভাষা পাঠ করিতে শিখিয়াছিলেন। অতএব ঐ সকল গ্রন্থ কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ পাঠ করিয়া পরমাপ্যায়িত হইলেন। কাব্য পাঠ করিয়া তুষ্ট হইলেন বটে, কিন্তু ঐ গ্রন্থ সকল তাদৃশ স্থলে প্রাপ্ত