ভক্ষ্য দ্রব্য প্রস্তুত করণের যথাযোগ্য স্থান প্রাপ্ত হইয়া হরিণশিশুকে একটা বৈদ্ব্যতাগ্নি- শুল্ক বৃক্ষমূলে স্থাপন করত দুই খানি শুষ্ককাষ্ঠ ঘর্ষণদ্বারা অগ্নি প্রজালিত করিলেন। অনস্তর অসি ধারণপূর্বক মৃগশাবকের প্রাণবধে উদ্যত হইয়াছেন, দৈবাৎ অদূরে দণ্ডায়মান মৃগমাতার প্রতি নেত্রপাত হইল। আহা! পশু জাতির মধ্যেও অপত্য স্নেহ কি প্রবল! হরিণী উন্নতমুখী হইয়া জলধারাকুল লোচনে পথিকের প্রতি নিনিমেষ দৃষ্টি করিয়া রহিয়াছিল॥ পরে, ক্ষণে স্বীয় শাবকের প্রতি এবং ক্ষণে পথিকের প্রতি সকরুণ দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে এক এক পা করিয়া শাবকের সমীপগত হইলে, পথিক কিঞ্চিৎ অপসৃত হইয়া ধাড়াইলেন। হরিণী এক লঙ্কে শাবকের সংরহিত হইয়া তাহার অঙ্গ স্পৰ্শ করিল এবং পার্ষে শয়ন করিয়া নানা প্রকারে স্পষ্টৰূপে আনন্দ প্রকাশ করিতে লাগিল। পথিক পুনর্বার নিকট গমনের উপক্রম করিলেন। হরিণী অমনি দীঘল প্রদান করিল। কিন্তু অকৃত্রিম স্নেহ-বন্ধন প্রযুক্ত পলায়ন করিতে পারিল না পূৰ্ববৎ অপত্যবিরহবিষাদ প্রদৰ্শন করিতে লাগিল। পথোনিতে ঈস্ক মানুষ সদৃশ বাৎসল্য ভাব অবলোকনে কাহার মনে সত্ব গুণের উদয় না। হয়? পথিক কারুণ্যরসের প্রাদুর্ভাবে বিচলিতান্তঃকরণ হইয়া কুরঙ্গের কোমলাঙ্গ হইতে বন্ধন মোচন করত জাপার পবিত্র গনিন্দাস্তুভব করিলেন। মৃগশাবক মুক্ত হইয়া অতি শীব্র মাতৃসন্নিহিত হইল এবং সিদ্ধ:মনোরথ। হরিণী তৎক্ষণাৎ আনন্দধ্বনি করিয়া প্রস্থান করিল—কিন্তু শাবক সমভি-ব্যাহারে অটবী মধ্যে প্রবেশ করিবার পূর্বে, একবার সন্তানের জীবন রক্ষিতার প্রতি সজল দৃষ্টিদ্বারা কৃতজ্ঞতার চিহ্ন প্রকাশ করিয়া গেল।
ধর্ম্মাত্মা পথিক এইরূপ সদাশয়তা প্রকাশ দ্বারা অতীব চিত্ত প্রসাদ লাভ করিলেন। জীবন অপেক্ষা ইহলোকে অধিকতর প্রেমাস্পদ পদার্থ আর কি আছে? বিশেষতঃ নিকৃষ্ট জীবগণ অপরিণামদর্শী ও ইন্দ্রিয় প্রীতিপরায়ণ। এই জ্য জিজীবিষাবৃত্তি পথাদির মধ্যে অপেক্ষাকৃত প্রবল থাকে। হায়! তাহারা কি নির্ঘণ, যাহারা অকারণে কোন প্রাণীর জগদীশ্বর প্রদত্ত সর্বদুখ নিদান প্রণাপহরণ করিয়া আপনাদিগের চিত্ত কলুষিত করে। সাত্ত্বিক কর্মের কি অনির্বচনীয় মহিমা! অনুমান হয়, পবিত্র-