মণ্ডল পরিবেষ্টিত অম্লানকিরণ দ্বিজরাজ বিরাজ করিতেছেন। কিন্তু তাদৃশ স্বপ্ন দর্শনে পথিক এমত চঞ্চল-মনা হইয়াছিলেন যে, আর নিদ্রাবেশে নেত্র নিমীলিত করিতে পারিলেন না॥ পর্ণশয্যা হইতে উত্থিত হইয়া করতলে কপোল বিন্যাস পূর্বক হিমাংশুর ব্যোমান্ত অবলম্বন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। দেখিতে দেখিতে নভোমণ্ডল ঈষৎশুক্লাম্বর ধারণ করিল, চন্দ্রমামুখ ম্লান হইল, এবং দূরস্থ গিরি শৃঙ্গ সমুদায় হইতে কুজ্ঝটিকারাশি উত্থিত হইয়া দিঅণ্ডল প্রচ্ছন্ন করিল। ক্রমে পূর্বদিক কিঞ্চিৎ প্রকাশ হইল— পরে সহস্রাংশুর তীক্ষ্ম রশ্মি সমুদায় কুজ্ঝটিকা জাল বিদীর্ণ করিয়া বনমধ্যে প্রবেশ করিল—দূরস্থ মহীধর শৃঙ্গসকল প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড অগ্নিরাশি প্রায় উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল—নীহারমণ্ডিত বৃক্ষগণের পত্রবিটপাদি বালাতপ সংযোগে বিচিত্র বর্ণ ধরিল—এবং শিশিরসিক্ত শষ্পশয্যা যেন, রাত্রিবিহারী বনদেবীগণের পরিচ্যুত অঙ্গাভরণ বিভূষিত হইয়া তাদৃশ চাকচিক্যশালী হইতে লাগিল—তথা প্রশস্ত পত্র মাত্রেই পবিত্র অন্ধুভারে অবনত হইয়॥ সহৃদয় ব্যক্তির ন্যায় সদগুণধার বশতঃ নিজ নিজ নম্রতা স্বীকার করিতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে মন্দ মন্দ মারুতহিল্লোলে অথবা রবিরশ্মি সংযোগে যে যাহার আপনাপন শোভা —কেহ বা পৃথিবীতে অভিষেক করিল, কেহবা স্বৰ্গাভিমুখে প্রেরণ করিল—করিয়া, সকলে শান্তিপ্রদ হরিদ্বর্ণ ধারণ। করিয়া রহিল।
পাস্থ প্রাতঃকৃত্য সমাপনানন্তর শুষ্ক পত্রাদি সংযোগে অগ্নি জালনপূর্বক পূর্বদিবসের ন্যায় অন্ন পাক করিয়া প্রাতরাশ সম্পন্ন করিলেন। পরে পাথেয় দ্রব্যসামগ্রী সমুদায় স্কন্ধে আরোপণ করিয়া ভূতলে জানু পাতনপূর্বক আন্তরিক ভক্তি সহকারে সংযতমনোবৃত্তি হইয়া স্বীয় ধর্মের শাসনামুযায়ী পুণ্যধাম মক্কার প্রত্যভিমুখে ঈশ্বরারাধনা করিয়া পুনর্বার গমনোদ্যত হইলেন।
অপরিজ্ঞাত কানন পথে একাকী যাইতে যাইতে পূৰ্বরাত্রির অদ্ভূত স্বপ্নটী বারম্বার স্মৃতি পথারূঢ় হইতে লাগিল। স্বপ্নটা তাহার চিত্তপটে এমনি স্পষ্টরূপে চিত্রিত হইয়াছিল যে, এক এক বার বোধ হইল উহা অবশ্যই সত্য হইবে; আবার ভাবিলেন, আমি এই দেশে নাম ধাম বিহীন আগন্তুক