পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঔপনিষদ ব্রহ্ম
৩১

নাই, আত্ম ও পর জড় ও চেতন, দেশ ও কাল নিষ্কল পরমাত্মার দ্বারা এক মুহূর্ত্তেই অখণ্ডভাবে উদ্দীপ্ত হইয়া উঠে; তখন আমাদের এই পুরাতন পৃথিবীর দিকে চাহিলে ইহাকে আর ধূলিপিণ্ড বলিয়া বোধ হয় না, নিশীথ নভোমণ্ডলের নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে চাহিলে তাহারা শুদ্ধমাত্র অগ্নিস্ফুলিঙ্গরূপে প্রতীয়মান হয় না, তখন আমার অন্তরাত্মা হইতে আরম্ভ করিয়া ধুলিকণা, এই ভূমিতল হইতে আরম্ভ করিয়া নক্ষত্রলোক পর্য্যন্ত একটি শব্দ ধ্বনিহীন গাম্ভীর্য্যে উদ্গীত হইয়া উঠে—ওঁ,—একটি বাক্য শুনিতে পাই— অস্তি, তিনি আছেন—এবং সেই একটি কথার মধ্যেই সমস্ত জগৎচরাচরের, সমস্ত কার্য্যকারণের সমস্ত অর্থ নিহিত পাওয়া যায়। সেই মহান্ অস্তি শব্দকে কোনও আকারের দ্বারা মুর্ত্তি দ্বারা সহজ করা যায় কি? এমন সহজ কথা কি আর কিছু আছে যে তিনি আছেন? আমি আছি এ কথা যেমন জগতের সকল কথার অপেক্ষা সহজ তিনি আছেন এ কথা না বলিলে আমি আছি এ কথা যে আদ্যোপান্ত নিরর্থক মিথ্যা হইয়া যায়। আমার অস্তিত্ব বলিতেছে, আমার আত্মা বলিতেছে তিনি আছেন, সাকার মূর্ত্তি কি তদপেক্ষা সহজ সাক্ষ্য আর কিছু দিতে পারে?

 ব্রহ্মের সেই বিশুদ্ধ ভাব কিরূপে মনন করিতে হইবে?

নৈনমূর্দ্ধং ন তির্য্যঞ্চ ন মধ্যে পরিজগ্রভৎ
ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশঃ।