পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৪
কথা-চতুষ্টয়।

ঢালা অগোছালো। মাথার কাপড়, কোলের শিশু, ঘরকন্নার কাজ কিছুই সে সাম্‌লাইতে পারিত না। হাতে বিশেষ একটা কিছু কাজও নাই অথচ কোন কালে যেন সে অবসর করিয়া উঠিতে পারে না। ছোটযা তাহাকে অধিক কিছু কথা বলিত না, মৃদুস্বরে দুই একটা তীক্ষ্ণ দংশন করিত, আর সে হাউ হাউ দাউ দাউ করিয়া রাগিয়া মাগিয়া বকিয়া ঝকিয়া সারা হইত এবং পাড়াসুদ্ধ অস্থির করিয়া তুলিত।

 এই দুই যুড়ি স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও একটা আশ্চর্য্য স্বভাবের ঐক্য ছিল। দুখিরাম মানুষটা কিছু বৃহদায়তনের—হাড়গুলা খুব চওড়া—নাসিকা খর্ব্ব—দুটি চক্ষু এই দৃশ্যমান সংসারকে যেন ভাল করিয়া বোঝে না, অথচ ইহাকে কোনরূপ প্রশ্ন করিতেও চায় না। এমন নিরীহ অথচ ভীষণ, এমন সবল অথচ নিরুপায় মানুষ অতি দুর্লভ।

 আর ছিদামকে একখানি চক্‌চকে কালো পাথরে কে যেন বহুযত্নে কুঁদিয়া গড়িয়া তুলিয়াছে। লেশমাত্র বাহুল্যবর্জ্জিত এবং কোথাও যেন কিছু টোল খায় নাই। প্রত্যেক অঙ্গটি বলের সহিত নৈপুণ্যের সহিত মিশিয়া অত্যন্ত সম্পূর্ণতা লাভ করিয়াছে। নদীর উচ্চপাড় হইতে নিয়ে লাফাইয়া পড়ুক, লগি দিয়া নৌকা ঠেলুক, বাঁশগাছে চড়িয়া বাছিয়া বাছিয়া কঞ্চী কাটিয়া আনুক, সকল কাজেই তাহার একটি পরিমিত পারিপাট্য, একটি অবলীলা-কৃত শোভা প্রকাশ পায়। বড় বড় কালো চুল তেল দিয়া কপাল হইতে যত্নে আঁচড়াইয়া