পাতা:কথা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কথা
১৫

অশ্রুচোখে। হেমন্তের প্রভাত শিশিরে
ছলছল করে গ্রাম চূর্ণী নদীতীরে।


যাত্রীদল ফিরে আসে সাঙ্গ হোলো মেলা।
তরণী তীরেতে বাঁধা অপরাহু বেলা
জোয়ারের আশে। কৌতূহল অবসান,
কাঁদিতেছে রাখালের গৃহগত প্রাণ
মাসির কোলের লাগি।—জল শুধু জল
দেখে দেখে চিত্ত তার হয়েছে বিকল।
মসৃণ চিকণ কৃষ্ণ কুটিল নিষ্ঠুর,
লোলুপ লেলিহজিহ্ব সর্পসম ক্রূর
খল জল ছল ভরা, তুলি লক্ষ্য ফণা
ফুঁসিছে গর্জিছে নিত্য করিছে কামনা
মৃত্তিকার শিশুদের, লালায়িত মুখ।
হে মাটি, হে স্নেহময়ী, অয়ি মৌনমূক,
অয়ি স্থির, অয়ি ধ্রুব, অয়ি পুরাতন,
সর্ব-উপদ্রবসহা আনন্দভবন
শ্যামল কোমলা। যেথা যে-কেহই থাকে
অদৃশ্য দুবাহু মেলি টানিছ তাহাকে
অহরহ, অয়ি মুগ্ধ, কী বিপুল টানে
দিগন্ত-বিস্তৃত তব শান্ত বক্ষপানে।