পাতা:কথা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৮
কথা

যখন বছর দেড় বয়স শিশুর—
যকৃতের ঘটিল বিকার; জ্বরাতুর
দেহখানি শীর্ণ হয়ে আসে। দেবালয়ে
মানিল মানৎ মাতা, পদামৃত লয়ে
করাইল পান, হরিসংকীর্তন গানে
কাঁপিল প্রাঙ্গণ। ব্যাধি শান্তি নাহি মানে।
কাঁদিয়া শুধাল নারী—ব্রাহ্মণ ঠাকুর,
এত দুঃখে তবু পাপ নাহি হোলো দূর?
দিনরাত্রি দেবতার মেনেছি দোহাই,
দিয়েছি এত যে পূজা তবু রক্ষা নাই?
তবু কি নেবেন তাঁরা আমার বাছারে।
এত ক্ষুধা দেবতার? এত ভারে ভারে
নৈবেদ্য দিলাম খেতে বেচিয়া গহনা,
সর্বস্ব খাওয়ানু তবু ক্ষুধা মিটিল না?
ব্রাহ্মণ কহিল—“বাছা এযে ঘোর কলি।
অনেক করেছ বটে তবু এও বলি
আজকাল তেমন কি ভক্তি আছে কারো।
সত্যযুগে যা পারিত তা কি আজ পারো।
দানবীর কর্ণ কাছে ধর্ম যবে এসে
পুত্রেরে চাহিল খেতে ব্রাহ্মণের বেশে
নিজহস্তে সন্তানে কাটিল। তখনি সে
শিশুরে ফিরিয়া পেল চক্ষের নিমিষে।