সামনে বসি তার বরজলাল ধরেছে সাহানার সুর-
সে-সব দিন আর সে-সব গান হৃদয়ে আছে পরিপূর।
সে ছাড়া কারও গান শুনিলে তাই মর্মে গিয়ে নাহি লাগে
অতীত প্রাণ যেন মন্ত্রবলে নিমেষে প্রাণে নাহি জাগে।
প্রতাপরায় তাই দেখিছে শুধু কাশীর বৃথা মাথা-নাড়া–
সুরের পরে সুর ফিরিয়া যায়, হৃদয়ে নাহি পায় সাড়া।
থামিল গান যবে ক্ষণেক-তরে বিরাম মাগে কাশীনাথ;
বরজলাল-পানে প্রতাপরায় হাসিয়া করে আঁখিপাত।
কানের কাছে তার রাখিয়া মুখ কহিল, “ওস্তাদ জি,
গানের মতাে গান শুনায়ে দাও, এরে কি গান বলে, ছি!
এ যেন পাখি লয়ে বিবিধ ছলে, শিকারী বিড়ালের খেলা।
সে কালে গান ছিল, এ কালে হায় গানের বড়াে অবহেলা।”
বরজলাল বুড়া শুক্লকেশ, শুভ্র উষ্ণীষ শিরে,
মিনতি করি সবে সভার মাঝে আসন নিল ধীরে ধীরে।
শিরা-বাহির-করা শীর্ণ করে তুলিয়া নিল তানপুর,
ধরিল নতশিরে নয়ন মুদি ইমন-কল্যাণ সুর।
কাঁপিয়া ক্ষীণ স্বর মরিয়া যায় বৃহৎ সভাগৃহ-কোণে,
ক্ষুদ্র পাখি যথা ঝড়ের মাঝে উড়িতে নারে প্রাণপণে।
বসিয়া বামপাশে প্রতাপরায়, দিতেছে শত উৎসাহ-
“আহাহা বাহা বাহা” কহিছে কানে, "গলা ছাড়িয়া গান গাহ।”
পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
কাহিনী