কোথায় দূরে গেল সুরের খেলা, কোথায় তাল গেল ভাসি,
গানের সুতা ছিঁড়ি পড়িল খসি, অশ্রুমুকুতার রাশি।
কোলের সখী তানপুরার 'পরে রাখিল লজ্জিত মাথা-
ভুলিল শেখা গান, পড়িল মনে বাল্যক্রন্দনগাথা।
নয়ন ছলছল, প্রতাপরায় কর বুলায় তার দেহে-
“আইস হেথা হতে আমরা যাই” কহিল সকরুণ স্নেহে।
শতেক-দীপ-জ্বালা নয়ন-ভরা ছাড়ি সে উৎসবঘর
বাহিরে গেল দুটি প্রাচীন সখা ধরিয়া দুঁহু দোঁহা-কর।
বরজ করজোড়ে কহিল, “প্রভু, মােদের সভা হল ভঙ্গ।
এখন আসিয়াছে নূতন লােক, ধরায় নব নব রঙ্গ।
জগতে আমাদের বিজন সভা কেবল তুমি আর আমি-
সেথায় আনিয়াে না নূতন শ্রোতা, মিনতি তব পদে স্বামী।
একাকী গায়কের নহে তাে গান, মিলিতে হবে দুই জনে-
গাহিবে একজন খুলিয়া গলা, আরেক জন গাবে মনে।
তটের বুকে লাগে জলের ঢেউ, তবে সে কলতান উঠে-
বাতাসে বনসভা শিহরি কাঁপে, তবে সে মর্মর ফুটে।
জগতে যেথা যত রয়েছে ধ্বনি যুগল মিলিয়াছে আগে-
যেখানে প্রেম নাই, বােবার সভা, সেখানে গান নাহি জাগে।”
২৪ আষাঢ় ১২৯৯