পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৭

পুরাতন ভৃত্য

ভূতের মতন চেহারা যেমন,  নির্বোধ অতি ঘাের-
যা-কিছু হারায় গিন্নি বলেন,  “কেষ্টা বেটাই চোর।”
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত,  শুনেও শোনে না কানে।
যত পায় বেত না পায় বেতন,  তবু না চেতন মানে।
বড়াে প্রয়ােজন, ডাকি প্রাণপণ  চীৎকার করি “কেষ্টা”-
যত করি তাড়া নাহি পাই সাড়া,  খুঁজে ফিরি সারা দেশটা।
তিনখানা দিলে একখানা রাখে,  বাকি কোথা নাহি জানে;
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে  তিনখানা করে আনে।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে  নিদ্রাটি আছে সাধা;
মহাকলরবে গালি দেই যবে  “পাজি হতভাগা গাধা”-
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে,  দেখে জ্বলে যায় পিত্ত।
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার-  বড়ো পুরাতন ভৃত্য।

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি  বলে, “আর পারি নাকো,
রহিল তােমার এ ঘর-দুয়ার,  কেষ্টারে লয়ে থাকো।
না মানে শাসন বসন বাসন  অশন আসন যত
কোথায় কী গেল, শুধু টাকাগুলো  যেতেছে জলের মতাে।
গেলে সে বাজার সারা দিনে আর  দেখা পাওয়া তার ভার-
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি  ভৃত্য মেলে না আর!”