পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাতন ভৃত্য
১৩৯

জন-ছয়-সাতে মিলি এক সাথে  পরম বন্ধুভাবে
করিলাম বাসা; মনে হল আশা,  আরামে দিবস যাবে।
কোথা ব্রজবালা কোথা বনমালা,  কোথা বনমালী হরি!
কোথা হা হন্ত, চিরবসন্ত!  আমি বসন্তে মরি।
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতাে  বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ;
আমি একা ঘরে, ব্যাধি-খরশরে  ভরিল সকল অঙ্গ।
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ,  “কেষ্ট আয় রে কাছে।
এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেশে  প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে।”
হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক,  সে যেন পরম বিত্ত-
নিশিদিন ধরে দাঁড়ায়ে শিয়রে  মাের পুরাতন ভৃত্য।

মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল,  শিরে দেয় মাের হাত;
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম,  মুখে নাই তার ভাত।
বলে বার বার, “কর্তা, তােমার কোনাে ভয় নাই, শুন-
যাবে দেশে ফিরে, মাঠাকুরানীরে  দেখিতে পাইবে পুন।”
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম;  তাহারে ধরিল জ্বরে;
নিল সে আমার কালব্যাধিভার  আপনার দেহ-'পরে।
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন,  বন্ধ হইল নাড়ী;
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে,  এত দিনে গেল ছাড়ি।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে  ফিরিনু সারিয়া তীর্থ;
আজ সাথে নেই চিরসাথি সেই  মাের পুরাতন ভৃত্য।

১২ ফাল্গুন ১৩০১