পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
কপালকুণ্ডলা।

রহস্য, পৃথিবীতে যাহাকে যাহাকে সুখ বলে, সকলই দিব; কিছুই তাহার প্রতিদান চাহি না; কেবল তোমার দাসী হইতে চাহি। তোমার যে পত্নী হইব, এ গৌরবও চাহি না, কেবল দাসী!”

 নবকুমার কহিলেন, “আমি দরিদ্র ব্রহ্মণ, ইহ জন্মে দরিদ্র ব্রাহ্মণই থাকিব। তোমার দত্ত ধন সম্পদ লইয়া যবনীজার হইতে পারিব না।”

 যবনীজার? নবকুমার এ পর্য্যন্ত জানিতে পারেন নাই যে, এই রমণী তাঁহার পত্নী। লুৎফ্-উন্নিসা অধোবদনে রহিলেন। নবকুমার তাঁহার হস্ত হইতে বস্ত্রাগ্রভাগ মুক্ত করিলেন। লুৎফ্-উন্নিসা আবার তাঁহার বস্ত্রাগ্র ধরিয়া কহিলেন,

 “ভাল, সে যাউক। বিধাতার যদি সেই ইচ্ছা, তবে চিত্তবৃত্তি সকল অতল জলে ডুবাইব। আর কিছু চাহি না, এক এক বার তুমি এই পথে যাইও; দাসী ভাবিয়া এক এক বার দেখা দিও; কেবল চক্ষু পরিতৃপ্ত করিব।”

 নব। তুমি যবনী—পরস্ত্রী—তোমার সহিত এরূপ আলাপেও দোষ। তোমার সহিত আর আমার সাক্ষাৎ হইবে না।”

 ক্ষণেক নীরব। লুৎফ্-উন্নিসার হৃদয়ে ঝটিকা বহিতে ছিল। প্রস্তরময়ীমূর্ত্তিবৎ নিস্পন্দ রহিলেন। নবকুমারের বস্ত্রাগ্রভাগ ত্যাগ করিলেন। কহিলেন, “যাও।”

 নবকুমার চলিলেন। দুই চারি পদ চলিয়াছিলেন মাত্র, সহসা লুৎফ-উন্নিসা বাতোন্মূলিত পাদপের ন্যায়