বর্ণ সেইরূপ চন্দ্রাৰ্দ্ধকৌমুদীময় বটে, কিন্তু যেন পূর্ব্বাপেক্ষা ঈষৎ সমল, যেন আকাশ প্রান্তে কোথা কাল মেঘ দেখা দিয়াছে। কপালকুণ্ডলা একাকিনী বসিয়াছিলেন না; সখী শ্যামাসুন্দরী নিকটে বসিয়াছিলেন। তাঁহাদিগের উভয়ে পরস্পরে কথোপকথন হইতেছিল। তাহার কিয়দংশ পাঠক মহাশয়কে শুনিতে হইবেক।
কপালকুণ্ডলা কহিলেন, “ঠাকুরজামাই আর কত দিন এখানে থাকিবেন?”
শ্যামা কহিলেন, “কালি বিকালে চলিয়া যাইবে। আহা! আজি রাত্রে যদি ঔষধটি তুলিয়া রাখিতাম, তবু তারে বশ করিয়া মনুষ্যজন্ম সার্থক করিতে পারিতাম। কালি রাত্রে বাহির হইয়াছিলাম বলিয়া নাতি ঝাঁটা খাইলাম; আর আজি বাহির হইব কি প্রকারে?”
ক। “দিনে তুলিলে কেন হয় না?”
শ্যা। “দিনে তুলিলে ফল্বে কেন? ঠিক দুই প্রহর রাত্রে এলো চুলে তুলিতে হয়। তা ভাই মনের সাধ মনেই রহিল।”
ক। “আচ্ছা, আমি ত আজি দিনে সে গাছ চিনে এয়েছি, আর যে বনে হয় তাও দেখে এসেছি। তোমাকে আজি আর যেতে হবে না, আমি একা গিয়া ঔষধ তুলিয়া আনিব।”
শ্যা। “এক দিন যা হইয়াছে তা হইয়াছে। রাত্রে তুমি আর বাহির হইও না।”