পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাপালিক সঙ্গে।
২৯

বেগে পূর্ব্বদৃষ্টা রমণী তাঁহার পার্শ্ব দিয়া চলিয়া গেল। গমন কালে তাঁহার কর্ণে বলিয়া গেল “এখনও পলাও। নরমাংস নহিলে তান্ত্রিকের পূজা হয় না তুমি কি জান না?”

 নবকুমারের কপালে স্বেদবিগম হইতে লাগিল। দুর্ভাগ্যবশতঃ যুবতীর এই কথা কাপালিকের কর্ণে গেল। সে কহিল, “কপালকুণ্ডলে!”

 স্বর নবকুমারের কর্ণে মেঘগর্জনবৎ ধ্বনিত হইল। কিন্তু কপালকুণ্ডলা কোন উত্তর দিল না।

 কাপালিক নবকুমারের হস্তধারণ করিয়া লইয়া যাইতে লাগিল। মানুষঘাতী করস্পর্শে নবকুমারের শোণিত ধমনীমধ্যে শতগুণ বেগে প্রধাবিত হইল—লুপ্তসাহস পুনর্ব্বার আসিল। কহিলেন, “হস্ত ত্যাগ কৰুন।”

 কাপালিক উত্তর করিল না। নবকুমার পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমায় কোথায় লইয়া যাইতেছেন?”

 কাপালিক কহিল “পূজার স্থানে।”

 নবকুমার কহিলেন “কেন?”

 কাপালিক কহিল “বধার্থ।”

 অতিতীব্রবেগে নবকুমার নিজহস্ত টানিলেন। যে বলে তিনি হস্ত আকর্ষিত করিয়াছিলেন, সচরাচর লোকে হস্তরক্ষা করা দূরে থাকুক—বেগে ভূপতিত হইত। কিন্তু কাপালিকের অঙ্গমাত্রও হেলিল না;—নবকুমারের প্রকোষ্ঠ তাহার হস্তমধ্যেই রহিল। নবকুমারের অস্থিগ্রন্থি সকল যেন ভগ্ন হইয়া গেল। মুমূর্ষুর ন্যায় কাপালিকের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন।