পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৬
কপালকুণ্ডলা।

পারেন, কিন্তু যদি কেহ এরূপ শ্যামার মন্ত্রে মুগ্ধ হয়েন তবে তাঁহাকে বর্ণজ্ঞানশূন্য বলিতে পারিব না। এ কথায় যাঁহার বিরক্তি জন্মায়, তিনি এক বার, নবচূতপল্লববিরাজী ভ্রমরশ্রেণীর ন্যায়, সেই উজ্জ্বলশ্যামললাটবিলম্বী অলকাবলি মনে কৰুন; সেই সপ্তমীচন্দ্রাকৃতললাটতলস্থ অলকস্পর্শী ভ্রূযুগ মনে কৰুন; সেই পক্বচূতোজ্জ্বল কপোলদেশ মনে কৰুন; তন্মধ্যবর্ত্তী ঘোরারক্ত ক্ষুদ্র ওষ্ঠাধর মনে কৰুন তাহা হইলে এই অপরিচিতা রমণীকে সুন্দরীপ্রধানা বলিয়া অনুভূত হইবে। চক্ষু দুইটি অতি বিশাল নহে, কিন্তু সুবঙ্কিমপল্লবরেখাবিশিষ্ট—আর অতিশয় উজ্জ্বল। তাঁহার কটাক্ষ স্থির, অথচ মর্ম্মভেদী। তোমার উপর দৃষ্টি পড়িলে তুমি তৎক্ষণাৎ অনুভূত কর, যে এ স্ত্রীলোক তোমার মনঃ পর্য্যন্ত দেখিতেছে। দেখিতে দেখিতে সে মর্ম্মভেদী দৃষ্টির ভাবান্তর হয়; আবার চক্ষু সুকোমল স্নেহময় রসে গলিয়া যায়। আবার কখন বা তাহাতে কেবল সুখাবেশজনিত ক্লান্তিপ্রকাশ মাত্র, যেন সে নয়ন মন্মথের স্বপ্নশয্যা। কখন বা লালসাবিস্ফারিত, মদনরসে টলমলায়মান। আবার কখন লোলাপাঙ্গে ক্রূর কটাক্ষ—যেন মেঘমধ্যে বিদ্যুদ্দাম। মুখকান্তি মধ্যে দুইটি অনির্ব্বচনীয় শোভা; প্রথম সর্ব্বত্রগামিনী বুদ্ধির প্রভাব, দ্বিতীয় মহান্ আত্মগরিমা। তৎকারণে যখন তিনি মরালগ্রীবা বঙ্কিম করিয়া দাঁড়াইতেন, তখন সহজেই বোধ হইত ইনি রমণীকুলরাজ্ঞী।

 সুন্দরীর বয়ঃক্রম সপ্তবিংশতি বৎসর—ভাদ্র মাসের