পাতা:কবিতা ও গান.djvu/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভুলে যেতে গিয়াছি ভুলিয়া।

মনে যেন পড়িছে এখন,
এক দিন ছিল সে আপন!
উঃ!যে কি যুগ যুগান্তর—
জ্যোৎস্নায় মগন চরাচর,
মরমর তরুর পাতায় •
বিহগের মধুর গাথায়,
উথলিত সন্ধ্যা উপবন,
উলসিত হৃদি প্রাণ মন,
বাহুপাশে বাঁধা দুইজনে,
চুপে কথা চুম্বনে চুম্বনে!
না জানি সে কত কাল গত!
স্মৃতি তার স্বপনের মত,
প্রাণপণে করিয়া যতন
জাগে যদি বিদ্যুত মতন,
তখনি মিলায় ধীরে ধীরে;
যে আঁধার সে আঁধারে ঘিরে।
সমুখে সেই সে অমনিশি,
স্তম্ভিত নীরব দশদিশি,
দু-জনে বসিয়া কাছাকাছি;
তবু দূরে-অতি দূরে আছি!,
নক্ষত্রের ক্ষীণালোক ফুটি
দেখাইছে বিরাগ ভ্রুকুটি;

অশ্রুজলে উখলিত প্রাণ,
অভিমানে বিশুষ্ক নয়ান;
সহসা চাহিয়া নভপ্রতি
কি দেখি এ ভীম দৃপ্ত অতি!
অনলের বর্ষি শতধারা
চারিদিকে খসিতেছে তারা;
ক্রোধে বিশ্ব উঠেছে রাঙ্গিয়া,
স্বষ্টি বুঝি পড়ে বা ভাঙ্গিয়া!
শিহরি চকিতে মুদি আঁখি
সকাতরে “নাথ’ বলি ডাকি—
আলিঙ্গিতে বাহু প্রসারিয়া
ভূমিতলে পড়িমু লুটিয়া।
পুনঃ যবে দেখিলাম চাহি,
চারিদিকে কোথা কেহ নাহি;
আঁধারে স্তম্ভিত চরাচর,
আমি শুধু পড়ে ভূমিপর;
কোথায় সে গিয়াছে চলিয়া,
নিতান্তই একেল ফেলিয়া!
এই মোর প্রণয়ের স্মৃতি,
এই মোর জীবনের মায়া,
এই মোর হৃদয়ের গান,
ভুলে যেতে গিয়াছি ভুলিয়া!