বিজয়া
আজ ছুটিয়া আসিয়াছি—বাড়ীতে আর থাকিতে পারিতেছি না, আমার ক্ষুদ্র কুটীর যেন কত বড় কত ফাঁকা মনে হইতেছে; মনে হইতেছে যে, গ্রামের সমস্ত লোককে আমার উঠানে জড় করিলেও যেন সে ফাঁক ভরিয়া উঠিবে না। এমন নিস্তব্ধ নির্জ্জন স্থান আমি কখনও কোথাও দেখি নাই। আমি সেখানে কেমন করিয়া থাকিব জানি না।
আমি। কোন্টা নির্জ্জন মনে হচ্ছে ঠিক বুঝতে পাচ্চ কি?—মনের ভিতরটা, না ঘরের ভিতরটা?
প্রসন্ন। কি জানি! আমার ছেলে নাই মেয়ে নাই—আঁচল দিয়া প্রতিমার চরণ যখন মুছাইয়া লইলাম, তখন আমার বুকের ভিতর যে কি রকম করিয়া উঠিল, তাহা আমি বলিতে পারি না—যেন আমারই মেয়ে আমার গৃহ শূন্য করিয়া স্বামীর বাড়ী চলিয়া যাইতেছে। সে কষ্ট কেমন তাহা, আমি মা নই, ঠিক বলিতে পারি না, তবে আমার মনে হয় ঐ রকমই। আমার মনে হইল, মা’র চোখেও যেন জল দেখিলাম! পাড়ার মেয়ে শ্বশুরঘর করিতে চলিয়াছে, মা’র চোখে জল, মেয়ের চোখে জল, দেখাদেখি আমারও চোখে জল আসিয়াছে, কিন্তু এমনতর কষ্ট তো তখন হয় নাই। এখন বুকটা যেন ফাটিয়া যাইতেছে; সব যেন শূন্য মনে হইতেছে।
আমি। এতগুলা টাকা যে বাজে খরচ হইয়া গেল, প্রসন্ন! সেটা কি একবারও মনে হচ্ছে না?
প্রসন্ন। মোটেই না। আমার মনে হইতেছে টাকা দিয়া কেনা যায় না এমন-একটা-কিছু ভাগ্যক্রমে পাইয়াছিলাম, আজ তাহা
৭