কমলাকান্তের পত্র
হারাইয়াছি, আর বুঝি তা কখনও ফিরিয়া পাইব না।
আমি মনে মনে এই মাতৃপূজার প্রবর্ত্তক মহাপুরুষকে কোটি কোটি প্রণাম করিলাম। বলিহারি তোমার রচনা। এই ‘আভাঙ্গা’ গয়লার মেয়ের মনকে কি আশ্চর্য্য উপায়ে তোমার শিক্ষা-পদ্ধতি তার এই দুনিয়ার চূড়ান্ত ঐশ্বর্য্য ধনসম্পদের আবিল আবর্ত্ত হইতে উত্তোলন করিয়া প্রকৃত ঐশ্বর্য্যের দিকে তুলিয়া লইল; এ গয়লার মেয়ে স্বল্পকালের জন্যও তোমার অদ্ভুত সৃষ্টি কৌশলে এমন এক ভাব রাজ্যে নীত হইল যে, সে আর মণিকে মণি বলিয়া মানিল না, টাকার চেয়েও একটা কিছু বড়—একটা কিছু প্রিয়তর ইষ্টতর জিনিষের ইঙ্গিত পাইল। বলিহারি তোমার কল্পনা। এই পার্থিব জীবনে পণ্ডিত-মূর্খ, ধনী-দরিদ্র, পুরুষ-নারী সকলেরই তো ঐহিকতার অগ্নিকুণ্ড হইতে পরিত্রাণ আবশ্যক। এই পরিত্রাণের কি অদ্ভুত পথই না তুমি আবিষ্কার করিয়াছ! বেদান্তের গভীর সিদ্ধান্তগুলি হৃদয়ঙ্গম করিবার জন্য প্রত্যেক মানুষকে যদি টোলের প্রথম পাঠ হইতে আরম্ভ করিয়া শেষ পর্য্যন্ত পৌঁছিতে হইত, তাহা হইলে বাস্তবিকই এই এক জন্মের সাধনায় বর্ণপরিচয়ও শেষ হইত না; কেবল তাই নয়, মানুষ তাহার হৃদয়ের ক্ষুধা নিবৃত্তি করিবার জন্য এক এক করিয়া চতুঃষষ্টিসহস্র যোনি ভ্রমণ করিয়াও বুঝি তৃপ্ত হইতে পারিত না। অথচ তাহার সে ক্ষুধা তাহাকে নিবৃত্ত করিতেই হইবে, নহিলে তাহার মুক্তি নাই। এই মুক্তি যদি তাহাকে বুদ্ধির ধাপে ধাপে উঠিয়া অর্জ্জন করিতে হইত তাহা হইলে তাহা চিরকালই অর্জ্জনের বস্তুই থাকিয়া যাইত, অর্জ্জিত আর হইত না। কেবল বুদ্ধি
৮