পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ

সত্য। মোটের মাথায় সকল বিয়েতেই যেমন বর তা'র তেমনি কন্যে, যেমন ‘দেবা' তেমনি 'দেবী'ই হ'য়ে থাকে; বিশেষ বিশেষ স্থলে যেখানে হয় না, বা হয় নি বলে' উভয় পক্ষের কা’রও সন্দেহ হয়, সেইখানেই গোল বাধে। কিন্তু যতদিন উভয়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সুধু উভয়ের জন্যই জীবন ধারণ করে’ থাকে, ততদিন তাদের মিলনটা ‘আবাগে’ আর ‘আবাগী’র মিলন ছাড়া আর কিছুই হয় না; জন্তু জানোয়ারের মিলন তা’র চেয়ে কিছুতেই অন্যবিধ নয়।

 বিয়েটাকে যে হিন্দু-শাস্ত্রে জন্ম-জন্মান্তরের বাঁধন বলেচে, তা’র নিগূঢ় অর্থ থেকে, সুধু বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে গোঁড়ামির একটা খুব কায়মি যুক্তি ছাড়া, আর কিছু পাওয়া যায় না তা‍’ নয়। আমি বুঝি—আমার পূর্ব্বজন্ম আমার পিতৃপুরুষগণ, আর আমার পরজন্ম আমার ঔরসজাত সন্তান থেকে আরম্ভ করে' আমার ভবিষ্যৎ বংশীয়গণ । এছাড়া পূর্ব্বজন্ম আর পরজন্মের আমি কোন মানেই খুঁজে পাই না। আমার পূর্ব্বজন্মের অর্থাৎ পূর্ব্বপুরুষগণের চেহারা ও চরিত্র নিয়ে আমি জন্মেচি, তাঁদের শক্তি এবং দুর্বলতার সমষ্টি potentialরূপে, সম্ভাবনা-রূপে আমার ভিতর রয়েছে; সে সম্ভাবনাকে ফুটিয়ে, এবং আমি যে নব নব পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিতর দিয়ে চলেছি, তা'র সাহায্যে বা তা'র ধাক্কায়, আমার চেহারা আর চরিত্রের যথাযথ পরিবর্ত্তন হ'য়ে, আমারই পূর্ব্বজন্মের চেহারা আর চরিত্রের বনিয়াদের উপর, দৃশ্যত এবং বস্তুত একটা নূতন জীব তৈরী হ'য়ে, এই জীবন-নাট্যমঞ্চে অভিনয় করে' চলে যাব। আমি যদি সত্তানোৎপত্তি না করে' জীবনটা শেষ করে' যাই, তা হ'লে

১৫৩