পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ

প্রেমকে বাদ দেওয়াও যায় না, তবে তাকেই বিবাহের চূড়ান্ত সার্থকতা করেচ কি অমনি সহস্র জীবনের গতিটা, Idealটা পাল্‌টে গেছে; তা'হলেই নিক্তির ওজনে দাম্পত্যের দাবী-দাওয়ার বিভাগ করবার আবদার আসবে, কে বড় কে ছোট, “বর বড় কি ক’নে বড়” তা’র মাপকাটী খুঁজতে ছুটে বেরিয়ে পড়তে হবে, স্বামীর কাছে আত্মোৎসর্গের নাম হবে দাসীত্ব, ছেলে মানুষকরার নাম হবে নারীত্বের অপচয়, আর যার জোরে এত লম্ফঝম্ফ অর্থাৎ “যৌবন জলতরঙ্গ”—ততক্ষণে তা’তে ভাটা পড়ে আসবে।

 আমাদের দেশে আমাদের সমাজে এই টগ্‌বগানিকে প্রশ্রয় দেবার ব্যবস্থা নেই,—হয় ভালই, না হয় কুছ পরোয়া নেই । কারণ এই সংসার কটাহে সুখদুঃখের তাড়নার মধ্যে দুইএ মিশে এক হবেই হবে, তবে একেবারে ভীমনাগের মণ্ডা যদি না হয় ত কুছ পরোয়া নেই। কারণ এই মিশে যাওয়াটাই চূড়ান্ত ব্যাপার নয়; এই মিলনের যে ফল, সন্তানসন্ততি, সেই সন্তানের পালন, তার শিক্ষা, তা’র গঠন, এক কথায় সমস্ত বংশগত উৎকর্ষের উত্তরাধিকারী করে' তা’কে সমাজে ও দেশে ছেড়ে দেওয়া, তা'রই জন্যে জীবনের সমস্ত শক্তির প্রয়োগ করতে হ’বে; আপনার জীবনে যেটা সিদ্ধ হ’ল না, অথচ হওয়া উচিত ছিল, পরজন্মে অর্থাৎ ছেলে-মেয়ের জীবনে যাতে সেটার পূরণ হ'তে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে; এইখানেই স্ত্রী-পুরুষের মিলনের সার্থকতার প্রথম স্তর, আর এইখানে Egotism আর টগ্‌বগানির অবসান।

 তারপর সমাজ ও জাতি; মা বাপের ঋণ বলে’ যদি কিছু থাকে

১৫৭