পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বপ্নলব্ধ রক্ষাকবচ

 আমি। হ্যাঁ সেটা ভাবনার কথা বটে—দুধ কমে যাওয়াটা ভাবনারই কথা—কিন্তু ও দুটা প্রক্রিয়া সঙ্গের সাথী—একটা হলেই আর একটা ‘কেন নিবার্য্যতে।’ মানুষই বল আর গরুই বল—ধ্যাড়ালেই অর্থাৎ দেহের রসের পরিপাক না হলেই—বুদ্ধি কম হবে, কাজ কম হবে, ফসল কম হবে, দুধ কম হবে—যার যেমন। কারণ শাস্ত্র বলেচেন—রসো বৈ সঃ, তিনিই রস, তিনিই গরুর বাঁটের দুধ—শিল্পীর রসোদ্গার, বিশ্বপ্রপঞ্চের সুসার, সৌন্দর্য্য।

 প্রসন্ন। নাও কথা—এখনও ঘোর কাটেনি দেখচি—বলি গরুটার একটা ওষুধবিশুধ বাৎলে দিতে পার—যাতে তোমার ঐ রস না মাথা পরিপাক হয়ে যায়?

 আমি। প্রসন্ন তুমি আমাকে এতদিনেও চিন্‌লে না ত, এইটেই সবচেয়ে নিদারুণ ছুরিকাঘাত—(cruellest cut of all). আমি কি গো-বদ্দি? মানুষের ওরোগ হলে বরং একটা ব্যবস্থার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু গরু—ছি প্রসন্ন, তোমায় আবার বলি আমি গো-বদ্দি নই।

 প্রসন্ন একটুও অপ্রতিভ না হয়ে, হাজারহোক নিছক গয়লার মেয়ে বইত নয়, বল্লে—“কেউটে ধরতে পার আর হেলে ধর্ত্তে পার না; মানুষের বদহজম নিবারণ কর্ত্তে পার আর গরুর পার না?”

 আমি। দেখ—আজ দেশসুদ্ধ সব বদহজমে ভুগছে, মন আর দেহ দুই শীর্ণ হয়ে যাচ্চে, রসের পরিপাক হচ্চে না, গায়েও গত্তি লাগ্‌চে না, মনেও নয়। বিরুদ্ধ ভোজন, অভোজন, স্বল্পভোজন—এ সবই বদহজমের কারণ।

১১