পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কমলাকান্তের পত্র

খড়্গ হস্ত হ'য়ে উঠবে, আমার তা'তে বিশেষ এসে যাবে না। আমি বলতে বাধ্য—গান্ধীজীর ভুলই হয়েচে, এবং খুব বড় রকমেরই ভুল হয়েচে। তিনি মানুষ চিনতে পারেন নি; “পড়িলে ভেড়ার শৃঙ্গে ভাঙ্গে হীরার ধার”—তাঁর হীরার ধার এই মেষপালের শিংএর স্পর্শে ভেঙ্গে গেছে। তিনি নিশ্চয়ই এখন তা বুঝতে পাচ্চেন; তাঁর শিষ্যবর্গ সে কথা স্বীকার করায় গুরুর অমর্য্যাদা করা হবে ভাবলেও, আমি বলব তাঁর মত বিচক্ষণ পুরুষ নিশ্চয়ই নিজের ভুলটা বুঝতে পাচ্চেন; তিনি যে ভেড়ার পালকে পক্ষীরাজ ঘোড়া মনে করেছিলেন—এইটে তাঁর প্রথম ভুল।

 তাঁর দ্বিতীয় ভুল এই, ভারতবর্ষকে যিনি উদ্ধার করবেন, তাঁকে ভারতবাসীর হ'য়ে সব কাজ করে' দিতে হবে—একথা তাঁর স্মৃতিপথ থেকে চলে’ গিয়েছিল। তাঁকে যে দেশসুদ্ধ লোক, বিশেষ করে’ তাঁর যাদের উপর বেশী নির্ভর, অর্থাৎ শিক্ষিত বলতে যারা তা ছাড়া ভারতের আর সকলে, তা'রা যে তাঁকে দেবতা বানিয়ে দিয়েছে, তা'র কি কোন গূঢ় অভিপ্রায় নেই? এক জনকে দেবতা বানালে তা'র উপর সবটা ছেড়ে দিলে, কাজ কত সহজ হ'য়ে আসে মহাত্মাজীর চেলারা কি বোঝে নি? চেলাগণ নির্ব্বিবাদে আপনাপন ধান্দা নিয়ে থাকবে—যে ব্যবসাদার সে খদ্দেরকে পেঁচিয়ে কাটতে থাকবে, যে জমিদার সে প্রজাকে জবাই করতে থাকবে, যে সুদখোর সে চক্রবৃদ্ধির চক্রে ফেলে অধমর্ণকে চরকির পাকে ঘোরাতে থাকবে, আর মহাত্মাজী শ্রীকৃষ্ণরূপে সুদর্শনচক্র ঘুরিয়ে অরাতি-নিধন করবেন, শ্রীরামচন্দ্ররূপে ধনুর্ব্বাণ হাতে যজ্ঞ-

১৬৪