পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মহাত্মার ভুল

বিঘ্নকারীদের জব্দ করবেন, এবম্বিধ division of labourএ কাজের কেমন সুবিধা মহাত্মাজীর চেলারা কি বোঝেনি? কারও গায়ে আঁচটি লাগবে না, অথচ কার্য্য ফতে হ’য়ে যাবে—এ ব্যবস্থা যে কত সুবিধাজনক তারা কি তা’ বোঝেনি?

 মহাত্মাজীর অভিপ্রায় নিশ্চয়ই তা' নয়; কিন্তু স্পষ্ট করে' তাঁর অভিপ্রায় যে তা নয়, তিনি স্বয়ং বুঝিয়ে দিলেও, আমার বিশ্বাস চেলারা তা’ বুঝবে না; তা'রা বল্‌বে — “প্রভু ছলনা করচেন, ভক্তদের পরীক্ষা করচেন, তিনিই করবেন সব, তবে হঠাৎ কি মহাপুরুষরা ধরা দিতে চান!” কিন্তু যে দিন বাধ্য হ'য়ে বুঝবে যে চরকার চাকা সুদর্শন-চক্র হবে না, সেদিন মহাত্মাজীর প্রতি যে-ভক্তি সুদর্শন-চক্রের সম্ভাবনাটা সৃজন করেচে সে-ভক্তির অবস্থা যে কি হ'বে, তা আমি ঠিক বল্তে পারচি না। সেটা একটা নিদারুণ tragedyই হবে বলে' আমার মনে হয়।

 ভারতবাসীর ভুতুড়ে ভাবটাকে যথেষ্ট রকম recognise না করাই মহাত্মাজীর একটা দারুণ ভুল হ'য়েচে; মানুষকে হঠাৎ দেবতা বানিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার ভাবটা যে মজ্জাগত ভারতীয় ভাব, সে বিষয়ে যথেষ্ট precaution না নেওয়াই হয়েচে ভুল। চেলাদের পক্ষে তাঁর ঋষিতুল্য মনুষ্য-চরিত্রে দেব-চরিত্রের আরোপ করে' তাঁকে খুব বড় করে' দেওয়া যত সহজে হ'য়েছে, তাঁর পক্ষে চরকার চাকা সুদর্শন-চক্রে পরিণত করা কিছুতেই তত সহজে হবে না। সুধু বিহারী কয়লাওয়ালা যে এই ভুলটা আঁকড়ে ধরে' আছে তা নয়, অজ্ঞ জনসাধারণ—যারা বাস্তবিকই ভারতের ভরসাস্থল—

১৬৫