পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কমলাকাস্তের পত্র

 তোমরা প্রসন্নকে চেননা, তাই এই অর্বাচীনের আপত্তি তুলচ। আমি প্রসন্নকে জানি, চিনি—আমি বলছি, প্রসন্ন পুরুষও বটে নারীও বটে। সে যখন তা’র পাওনা-গণ্ডা আদায় করে, তখন সে কাবুলীওয়ালারও কান কেটে দেয়; মঙ্গলা যখন গোঁজ উপড়ে চোঁচা দৌড় দেয়, তখন তা'র দড়ি গাছটা ধরে' যখন সে তাকে stand still করে, তখন রামমূর্ত্তির মোটর-গাড়ী ধরা মনে পড়ে; সে পঞ্চাশটা খদ্দেরের দুধের হিসাব, যখন মুখে মুখে করে' দিয়ে balance sheet মিলিয়ে দেয়, তখন তা'কে কৃষ্ণলাল দত্তের পাশে স্থান না দিয়ে থাকা যায় না; আর পাড়ায় শ্বাশুড়ী-বৌএর ঝগড়ার বিচার কর্ত্তে কর্ত্তে, যখন সে পরস্পরের কর্ত্তব্য-অকর্ত্তব্যের বিশ্লেষণ করে’, দোষগুণের ওজন করে’, কোন অদৃশ্য জুরীর সমক্ষে charge দিতে থাকে, তখন তা'কে দায়রার জজের আসনে বসাতে ইচ্ছে করে; তারপর, অন্দর-মহলে যখন মেয়েদের মিছিল বসে, সুনীতি দুর্নীতির বিচার হয়, মেয়ে-পুরুষের চরিত্রগত কত কূট তর্কের বিশ্লেষণ হয়, কতক কথায়, কতক ছড়ায়, কতক কবিতায়, কতক গানে, কতক ইঙ্গিতেইসারায়, বোসেদের ঘোষেদের কুণ্ডুদের পালেদের চাটুয্যে-বাঁড়ুয্যেদের,— সমস্ত গ্রামটারই, পুরাবৃত্তের আলোচনা হয়, অতীত বর্ত্তমান কীর্ত্তি-অকীর্ত্তীর গবেষণা হয়, তা’তে প্রসন্ন, গয়লা বৌ হ'লে কি হয়, সে democratic সভায়, তা’র কত জানা-অজানা তথ্যের সম্ভার নিয়ে যখন বসে, তখন সে যে তত্ত্বজিজ্ঞাসু পুরুষ মহলের বিচার-সভার মর্য্যাদা রক্ষা কর্ত্তেও সক্ষম, তা’র ভূরি ভূরি প্রমাণ দিয়ে থাকে। তারপর সে যখন গললগ্নীকৃতবাস হ'য়ে গ্রামের

১৬৮