কমলাকান্তের পত্র
ইংরেজীনবীশ, তাঁর কথা আমি কানেই তুলতে প্রস্তুত নই), আমাদের গো-মাতাগণ আমাদের যত্নের চোটে “ছটাকে” হ'য়ে এসেচেন। কিন্তু তা'তে কি এসে যায়, আমরা গো-পার্ব্বণে তাঁদের গায়ে যথারীতি গেরীমাটির ছাপ দি; ইউরোপীয়গণ তা করে না। এই ত গেল গো-চর্য্যার কথা, এখানে মৌলিক পার্থক্য— খাওয়া ও খাওয়ান দুই দিকেই। গরুর পরেই ব্রাহ্মণের কথা, এখানেও সেই মৌলিক পার্থক্য। ইউরোপে যাজকতা কর্ত্তে গেলে পণ্ডিত হ'তে হয়, সাধন কর্ত্তে হয়, শিখতে হয়। এখানে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের নীচেই পুরুৎঠাকুরের স্থান; “বিদ্যাস্থানে ভয়ে বচ” হ'লেই, পুরুত-ঠাকুর আর হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। গো-ব্রাহ্মণ সম্বন্ধে ত এই বিভিন্ন ব্যবহার বিভিন্ন মনেরই লক্ষণ।
তারপর আহার, আমরা সাত্ত্বিক আহার করে' থাকি; ইউরোপীরগণ যা পায় তাই খায়, কে জানে সাত্ত্বিক, কে জানে অ-সাত্ত্বিক। আমরা খাই উদ্ভিদ, তা'রা খায় প্রাণী, এই জন্য আমরা অচল, আর তা'রা সচল প্রাণবন্ত কি না তা আমি বল্তে পারচি না; তবে পশুপক্ষীর analogy থেকে এটা দেখতে পাই, যে নিছক সাত্ত্বিক আহার খেয়ে, হাতি থেকে আরম্ভ করে' রাম-ছাগল পর্য্যন্ত, পরের বোঝা বয়, আর প্রাণীবধ করে' তা'র রক্ত পান করে’ খেঁকশিয়ালটা পর্য্যন্ত কারও হুকুমবরদার নয়; আমরা হয়ত হাতিতে চড়ে’ ইন্দ্রের সভায় গিয়ে উপস্থিত হব, আর ইউরোপীয়েরা পশুরাজের সঙ্গে নরকের আগুনে পুড়ে মরতে যাবে, তা হ'তে পারে; তা হ'লে আমরা spiritual আর তা’রা material এইটেই ত প্রমাণ হ'চ্চে!
১৭৪