পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রসন্ন গোয়ালিনীর আধ্যাত্মিকতা

 তারপর আমরা যার-তার হাতে খাই না, অন্ততঃ ব্রহ্মণ্যের নির্ব্বিষ খোলসখানাও কাঁধে পড়ে থাকা চাই, তবে তা’র হাতে খাব; আর ইউরোপীয়েরা যার-তার হাতে খাবে, সে “কিবা হাড়ি কিবা ডোম”। তাদের এমনি materialistic বুদ্ধি যে তা’রা মানুষে মানষে প্রভেদ দেখতে পায় না; মানুষ কি পশু না পাখী যে সব সমান হ’বে? অষ্ট্রেলিয়ার steppes এ না হয় সব ঘোড়া সমান, কিন্তু আড়গড়ার ভেতর পুরলে, ঘোড়ার শ্রেণীবিভাগ হ'য়ে, কোনটা ঘোড় দৌড়ের মাঠে যায়, আর কোনটা scavenger গাড়িতে জোড়া হয়; মানুষেরও কি তাই নয়? কিন্তু সে সূক্ষ্মদর্শন ওদের নেই, আমাদের আছে,— আমরা তা'র ব্যবস্থা করেছি, শ্রেণীবিভাগ করেছি, কারও হাতে খাই কারও হাতে খাই না। তবে মনের খাদ্য আহরণের বেলা তা'রা ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারো হাত থেকে বা মুখ থেকে গ্রহণ করে না; বিশিষ্ট জ্ঞান ও সাধনার পরিচয় যে না দিয়েছে, তা'র কাছ থেকে তা’রা জ্ঞানের কথা শুন্‌বে না; আর আমরা লম্পটের মুখেও বেদান্ত-ব্যখ্যা শুনব, ভূতের মুখেও রাম নাম শুনে ধন্য হ'ব। এটা আমাদের আধ্যাত্মিকতারই পরিচয়; কারণ আমরা চাই জ্ঞান, মানুষটা ত উপলক্ষ মাত্র, আমরা হংসের মত নীর পরিত্যাগ করে' ক্ষীর গ্রহণ করতে সক্ষম!

 তাদের ধর্ম্মপুস্তক, ধর্ম্মালোচনা, ধর্ম্মযাজক, ধর্ম্মমন্দির থাকলে কি হয়, তারা পরলোক মান্লে‌ কি হয়, তা'দের চরম বিচারকের বিচারে আস্থা থাকলে কি হয়, যেহেতু তা'রা ইহলোকটাকে উড়িয়ে দেয় নি, আর পরলোকটাকেই সর্ব্বস্ব করে’ তোলে নি,

১৭৫