পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বপ্নলব্ধ রক্ষাকবচ

ওষুধ দেয়, আর গরু সেরে যায়, তার একটা ব্যবস্থা করতে পার?

 আমি। সেটাও টোটকা তবে ভিতরের টোটকা, আর মাদুলী বাইরের টোটকা, এইমাত্র প্রভেদ। কিসে কি হয় তা যখন কোনটাতেই ঠিক জানা নেই, তখন ছুঁচের ডগায় শরীরের ভিতর চালাইয়া দাও, আর বাহিরে গলায় মাদুলী করিয়া ঝুলাইয়া রাখ একই কথা—শরীর-মনের দেবতা যদি ঔষধ গ্রহণ করিলেন ত ঔষধ ফলিল—আর না গ্রহণ করিলেন ত সব ঔষধ ভাসিয়া গেল। তাঁহাকে প্রসন্ন করিয়া ঔষধ গ্রহণ করান যখন মানুষের সাধ্য নহে—তখন মাদুলিও যা আর বিজ্ঞানসম্মত ঔষধও তাই। প্রসীদ প্রসীদ বলে’ জীবনদেবতাকে প্রসন্ন কর, আর মাদুলী পর—এই প্রকৃষ্ট উপায়।

 প্রসন্ন। তোমার সব কথা আমি বুঝতে পারি না—মিছে রাগ করিয়াই বা কি করি বল—প্রসন্ন হতাশ হইয়া বসিয়া রহিল।

 আমি প্রসন্নকে বলিলাম—প্রসন্ন, যাদের দেশে বিজ্ঞান রসায়ন ইত্যাদির বহু স্ফুরণের ফলস্বরূপ গতযুদ্ধে শত শত লোক মরিল—তাহাদের দেশে প্রতিদিনের কার্য্যে, গৃহস্থলীতে, সমাজে, রাষ্ট্রীয়ব্যাপারে, যুদ্ধক্ষেত্রে, ঘোড়দৌড়ের মাঠে, বেচাকেনার মধ্যে কত টোটকা, পদক, রক্ষাকবচ, Mascot ব্যবহার হয় তা তুমি জান? তুমি একেবারে বিজ্ঞানভক্ত বিদুষী হইয়া উঠিয়াছ, মানুষ যতদিন না সর্ব্বশক্তিমানের যুড়ী হইয়া উঠিতেছে, ততদিন এসব চলিবেই চলিবে, তা কি তুমি জান? রোগ হইলে ডাক্তার ডাক—আমি দিব্যচক্ষে দেখিতে পাই, ডাক্তারটা একটা চল্‌তি রক্ষাকবচ মাত্র, রোগমুক্ত হওয়া না হওয়া যে দেবতার অনুগ্রহ, তাঁহার সহিত পরিচয় ডাক্তার

১৩