পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভদ্রলোক

অধুনা প্রচলিত ভদ্রের কি সম্বন্ধ, বিচার করা দরকার হয়েচে।

 ভদ্র মানে সোণা, অর্থাৎ যাঁদের সোণা আছে তাঁরা ভদ্র; পয়সা থাকলেই ভদ্র, এ ত একটা প্রচলিত acceptation, পয়সা থাকলেই বাহিরটাকে চূণকান করে’ ভিতরের কালি ঢাকা দেওয়া যায়, সুতরাং যে কোন উপায়ে সুবর্ণের সংস্থান কর্ত্তে পারলেই, ভদ্দর হওয়ার পথ পরিষ্কার হ'য়ে যায়। যাঁরা বলেন পয়সা থাকলেই ভদ্দর হয় না, তাঁরা নিজে সে রসে বঞ্চিত বলেই বলেন।

 আর ভদ্র মানে ষাঁড়—উক্ষা ভদ্রো বলীবর্দ্দঃ ঋষভো বৃষভো বৃষঃ ইত্যমরঃ—অর্থাৎ সেই ভদ্র যে ঘাঁড়। এ অর্থ কোথা থেকে এলো তা'র তত্ত্ব আবিষ্কার করতে হয়। মনুষ্য-গোষ্ঠীর একটা অবস্থা ছিল, যখন শরীরের বলই ছিল মুলাধার; যা'র ষাঁড়ের মত গোঁ ছিল, গুঁতোবার শক্তি ছিল, সেই ছিল মানুষ, আর সব অ–মানুষ; আর তা'র শিংএর প্রতি সেলাম দিয়ে লোকে বল্ত-ভদ্র, ভাল মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ, মনুষ্য-শ্রেষ্ঠ। বল ছিল ভদ্রতার অর্থাৎ শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ,— তাই ভরতর্ষভ, বলভদ্র, বীরভদ্র এই সব নাম হ'য়েচে। এই অর্থে ভদ্র কথাটা ব্যবহার হ’তে আরম্ভ হ'লে, কমলাকান্তর বড় সুবিধা হবে না- তা না হ’ক, আমি অভদ্রই হব, যদি আর সকলে এই অর্থে ভদ্র হয়।


১৮৯