পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আঁটকুড়ী

হবার জন্যই রমণী হয়েছিলে; আর তোমার জন্মের মৌলিক উদ্দেশ্য তোমা হ’তে সাধিত হয় নি বলে', ভাল শুনাক আর নাই শুনাক, সত্য সত্যই তুমি প্রকৃতির উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে’ আজ আঁটকুড়ী!

 প্রসন্ন এতক্ষণে মুখ খুলিল, কেননা, আঁটকুড়ী কথাটা সে কিছুতেই বরদাস্ত করিতে পারিতেছিল না।

 প্রসন্ন। মেয়েমানুষকে বিয়েই করতে হবে, আর ছেলে বিয়োতেই হবে, তারই বা মানে কি?

 আমি। প্রসন্ন, আমার মত বুড়ো ভূশুণ্ডীকে আর ও-প্রশ্ন কর’ না; উর্ব্বাচীনদের ও হেঁয়ালি বলে' ধাঁধা লাগাতে চেষ্টা কর'। সাত পাক দিয়ে বিয়ে করতে হবে কি না হবে, সেটা সমাজ বুঝবেন; কিন্তু মেয়েমানুষকে বিয়ে করতেই হবে—তা সাত পাকেই হ’ক, বিনি পাকেই হ’ক, আর বিপাকেই হ’ক। আর যতদিন পুরুষের উরুদেশ ভেদ করে' সন্তানের জন্ম, ও তর্জ্জনী হ’তে দুগ্ধক্ষরণ উপন্যাসের পৃষ্ঠা হ'তে নেমে এসে এই বাস্তবজগতে সত্য হ'য়ে না উঠবে, ততদিন মেয়েমানুষকে ছেলে বিয়োতেই হবে, আর ওটা একমাত্র তাদেরই কৃত্য মধ্যে পরিগণিত থাকবে।

 প্রসন্নর চোখ তখন আবার জলে ভরিয়া উঠিল।

 সে বলিল—তবে কি যার ছেলে হ'ল না সে একেবারে দুনিয়ার বার হ’য়ে গেল? অনেক পুত্রহীন কত সদাব্রত, কত দেউল, কত পুষ্করিণী করে' দিয়েছে, তা’তে কি লোকের উপকার হয় নি? কত পুত্রহীনা নারী ধর্ম্মের পথে, লোকহিতের পথে, কত কীর্ত্তি রেখে গেছে সেগুলা কি অপুত্রক বলে’ ধর্তব্যের মধ্যে নয়?

২৭