কমলাকান্তের পত্র
কাহারও অবিদিত ছিল না। যাহা হউক বলিহারি বোকা গয়লার মেয়েকে! সে সেই সব—প্রথম ঠাকুর ফেলার বেলা একটু যা শিহরিয়া উঠিয়াছিল, তারপর বারবার এ উৎপাতে সে একেবারেই বিচলিত হয় নাই। ফেলা-ঠাকুরের পূজা যেন তাহার কৌলিক প্রথাই হইয়া গিয়াছিল, এবং প্রত্যেক পূজাটাই সে খুব সমারোহের সহিত করিয়াছিল; গ্রামসুদ্ধ লোককে ভূরিভোজনে পরিতুষ্ট করিয়াছিল। হঠাৎ তাহার কষ্টার্জিত পয়সার প্রতি সে কি জন্য এত নির্ম্মম হইয়া উঠিল তাহা বুঝা গেল না; তবে ইহা বেশ বুঝা গেল সে যে ঠিক কত পয়সার মালিক চোরেও তা’র সন্ধান পায় নাই, নতুবা এই ঘোরান উপায়ে তাহার সৎকার করাইতে হইত না।
কিন্তু এত করিয়াও পাড়ার লোকে প্রসন্নকে নিশ্চিন্ত হইতে দিল না। যে সকল ষণ্ডামার্ক যুবকের দল তাহার প্রতিমা পূজার সহায়তা করিয়াছিল—মেরাপ বাঁধিয়া, তালপাতার ঘর করিয়া দিয়া, রন্ধন পরিবেশন ইত্যাদি ভূতের মত, রাত নাই দিন নাই, খাটিয়া ঠাকুর-সেবার সহায়তা করিয়াছিল—তাহারা এখনও প্রসন্নকে ছাড়ে না— বলে, তাহাদের একদিন ভাল করিয়া না সেবা লইলে তাহার সর পূজা পণ্ড, পাঠ পণ্ড, লোক-সেবা পণ্ড; যেহেতু তাহারা না থাকিলে তাহার এত করিত কে?
মোল্লার দৌড় মসজিদ অবধি, অর্থাৎ স্বর্গদ্বার পর্য্যন্ত নয়। অতএব আমি আফিংএর মৌতাতেই থাকি আর সজ্ঞানেই থাকি, আর আমার দ্বারা তাহার পরিত্রাণ সম্ভব হউক আর না হউক, প্রসন্নর মাথা আটকাইলেই আমার কাছে ছুটিয়া আসিবেই আসিবে। তাই
৩০