পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কমলাকান্তের পত্র

প্রায় সেইখানেই মনটা হঠাৎ বহির্মূখ হ'য়ে উঠে, হাল ফ্যাসানমত কথায় দেশসেবা, সমাজ-সংস্কার ইত্যাদির দিকে মনটা ছুটে বেরিয়ে পড়ে। প্রসন্নর একটি বিড়াল আছে, সে কখন কখন আমার দুধে ভাগ বসায়, সেটাকে প্রসন্ন বড় ভালবাসে; প্রসন্নর সে মার্জ্জারপ্রীতি, আমি বুঝতে পারি, তা’র বুভুক্ষিত মাতৃহৃদয়ের সন্তানপ্রীতিরই রূপান্তর আর কিছু নয়। অনেক স্ত্রীসুলভ বাতিক (Hobby) তাঁদের হৃদয়ের কোন-না-কোন জ্ঞাত বা অজ্ঞাত শূন্য কন্দর পূর্ণ করার ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র।

 রমণীর এই মাতৃত্ব অর্থাৎ স্ত্রীত্ব বজায় রাখবার জন্য, সূক্ষ্মদর্শী হিন্দুশাস্ত্রকার কন্যামাত্রেরই বিবাহ অর্থাৎ স্বামিসম্পর্কের ব্যবস্থা করেছিলেন। Courtship বা flirtationএর অনিশ্চিৎ জুয়াখেলার উপর যৌন-সম্মিলনের ইমারৎ তোলবার ব্যবস্থা করেন নি। ইউরোপীয় কুমারীগণ অনেক সময় সেই flirtation অর্থাৎ বন্ধু সম্মিলন বা বঁধু সম্মিলনের ‘বিষম ঘুরণ পাকে’ হাবুডুবু খেয়ে হাঁপিয়ে উঠে, মাতৃত্বে তথা মনুষ্যত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে, বিদ্রোহী হ'য়ে উঠচেন।

 আমি তাই বলচি—মা সকল, মা হও। কাউন্‌সিল বল, কোর্ট বল, সভা বল, সমিতি বল, বক্তৃতা বল, বৈচিত্র্য হিসাবে খুব অভিনব হ'লেও, ও-সব পন্থা, মা হওয়ার আগে নয়। “বাবা মেয়ের” দল পুষ্টি করে' সংসারের সর্ব্বনাশ ক'রো না, দেশের সর্ব্বনাশ ক’রো না। আমি বলে’ রাখলুম - পুরুষ পুরুষ, স্ত্রী স্ত্রী, the twain shall never meet.


৪৮