পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাগলের সভা

জিজ্ঞাসা করলে—'বাহাদুরী কার?' ছেলেরা হাঁ করে' রইল। গোপাল বার বার উক্ত পদটী আপন মনে পাঠ করলে, যত পড়ে তত গরম হ'য়ে উঠে। শেষে আপন মনে বলে’ উঠল—মূর্খ কবি! কেন remained to pray? — আরে বেটা, সে কি তোর পাদ্রীর বাহাদুরী না those who came to scoff তা’দের বাহাদুরী? তা'দের ভিতর যে ছাইচাপা আগুন ছিল, তোমার পাদ্রীর বক্তৃতার ফুৎকারে সেই ছাইগুলো মাত্র উড়ে গেল—আর প্রচ্ছন্ন অগ্নির রক্তবিভা প্রকটিত হ'য়ে পড়ল; পাদ্রীর ফুঁ আর তাদের আগুন। আগুন যদি না থাকত বা আগুন যদি নিবে গিয়ে থাকত, তুমি বেটা পাদ্রী ফুঁ পেড়ে পেড়ে চক্ষু রক্তবর্ণ করলেও আগুন জ্বলত না। ছাতারের বাসায় কোকিলের ডিম্, সে ডিমের ভিতর কোকিলের কুহুতান সুষুপ্ত থাকে—ছাতারে তা দিয়ে ফোটায় বলে' কি বাহাদুরী তার? ক্ষুদ্র বীজের ভেতর শেফালির সৌরভ নিদ্রিত, উড়ে বেটা গাছের গোড়ায় জল দেয় বলে' কি সৌরভের স্রষ্টা সে? জগাই মাধাই যদি খাঁটি সোনা না হ'য়ে প্রকৃতই খাঁটি লোহা হ'ত, তাদের লৌহহৃদয়কে গিল্টি করা চলত, সোনা করা সম্ভব হ'ত না। রত্নাকরের মুখে ‘মা নিষাদ—' ইত্যাদি শ্লোক বহির্গত হ'ত না, “মরা মরা” মন্ত্র আওড়ান সত্ত্বেও, যদি বাল্মিকীর করুণা-বিগলিত-হৃদয় রত্নাকরের বুকে প্রচ্ছন্ন না থাকত; রামায়ণের মর্ম্মস্পর্শী সঙ্গীত রত্নাকরের খুনে হৃদয়ের অন্তরতম স্তরে, অন্তঃশীলা ফল্গুর মত, গুমরিয়া গুমরিয়া ঝঙ্কৃত হ’তই হ’ত। নাবস্তনা বস্তসিদ্ধি:— nothing comes out of nothing.—ছেলেরা বেগতিক দেখে হেড্মাষ্টারকে খবর

৫৩