পাতা:কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২৩).pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাগলের সভা

 মধু। পিরীতে, পিরীতে —

 মাখন মধুসূদনের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল; মধুর কথা শেষ হ’লে “পাগল রে” বলে' হেসে উঠল।

 আমি কিন্তু এই ব্যক্তি চতুষ্টয়ের মানসিক ক্রিয়া— প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পাগল ও সহজের সীমানির্দেশ করতে পারলুম না । লোকে এই লোকগুলোকে কেন পাগল বলে, আর তাঁরা নিজেই বা কিসে সহজ, তা'র বিচার আমি করতে অক্ষম। প্রচলিত চিন্তাস্রোতের যারা উজানে যায় তারাই পাগল, আর সেই স্রোতে গা ভাসান দিয়ে যারা আরামে ভেসে চলে তারাই সহজ, একথা কেহ স্বীকার করবে না। গড্ডলিকাবৃত্তি পরিত্যাগ করে' নূতন পথ আবিষ্কার করতে গেলে বা নূতন চীন্তার ধারা বহাতে গেলে, কখন্ মৌলিকতা ছাড়িয়ে পাগলামি এসে পড়ে, তা’ও আমি ঠিক বলতে পারলুম না। তবে আমি এই বুঝলুম যে হঠাৎ লোককে খ্যাপা বলা চলে না।

 অবশেষে, যাঁরা নারীর মঙ্গল করবার জন্য, এবং সেই সঙ্গে পুরুষজাতির তথা মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য ব্যস্ত, তাঁদের এই মধু পাগলার কথাগুলি তলাইয়া বুঝিতে অনুরোধ করি। রমণীমাত্রেই দেবী বলিয়া তাঁহাদিগকে মাথায় করিবার প্রয়োজন নাই, তাহাতে প্রত্যবায়ই আছে। রমণীমাত্রেই যদি প্রচ্ছন্না দেবী হন, ত পুরুষ মাত্রেই প্রচ্ছন্ন দেবতা। বলা বাহুল্য, দুইটার একটাও সত্য নহে। তাই রমণীকেও বলি, আর পুরুষকেও বলি, মাথায় কাহাকেও বসাইও না; তবে “পিরীতে” যে খেলা খেলিতেই হইবে, তা’র চারা নাই ।

৫৫