পঞ্চম পরিচ্ছেদ > ○○ অগ্নিগুপ্তের সেনা লৌহনিৰ্ম্মিত প্রাচীরের ন্যায় অটল হইয়া দাড়াইয়া রহিল, সিতপৰ্ব্বতগাত্রে রক্তস্রোত প্রবাহিত হইল। আর্য্য-রক্তের সঠিত বৰ্ব্বারশোণিত মিশ্রিত হইয়া বালীকার চরণতল অপূৰ্ব্ব অলক্তকে রঞ্জিত করিল। শুভ্র অশ্বারোহণে শ্বেতবৰ্ম্মাবৃত্ব সিতকেশ বৃদ্ধ হুৈমগরুড়ধ্বজ তস্তে সৈন্য চালনা করিতেছিলেন । ধ্বজ হইতে দীর্ঘ শুভ্ৰ পতাকা শীতল সমীরণে পতপত শব্দে উড়িতেছিল। মাগধ-সেনার ক্ষীণ কৃষ্ণরেখা ক্রমশঃ ক্ষীণতর হইতেছিল। সমুদ্র-তরঙ্গের স্তায় রাশি রাশি তৃণ তাহাদিগকে আক্রমণ করিতেছিল। একে একে মাগধসেনা উত্তরাপথের তোরণ রক্ষার জন্ত আত্মবিসর্জন দিতেছিল । সহসা আক্রমণের বেগ ੇ হইল, শতের পরিবর্তে সহস্ৰ কুণ-অশ্বারোহী সেই সঙ্কীর্ণ পাৰ্ব্বত্যপথে পঞ্চাঙ্কত মাগধসেনা আক্রমণ করিতে লাগিল। তখন শতজন অশ্বারোঙ্গ অবশিষ্ট নাই, তাহা দেখিয়া অগ্নি গুপ্ত কহিলেন, “বন্ধুগণ ! আমরা অধিকক্ষণ নদীতীর্থ রক্ষা করিতে পারিব না কিন্তু আৰ্য্য সমুদ্রগুপ্তের গরুড়ধ্বজ বৰ্ব্বরস্পর্শে কলঙ্কিত হইতে দিব না।” বৃদ্ধ অবলীলাক্রমে ‘হৈমধ্বজ বহুখণ্ডে বিভক্ত করিয়া তাঙ্গ এক একজন গোল্মিকের হস্তে প্রদান করিলেন এবং পতাকা নিজ বক্ষস্থলে জড়াইয়া অবশিষ্ট মাগধ-সেনার সঠিত হ্ৰণ-সেনা আক্রমণ করিলেন। মুহূর্ভের জন্ত বৰ্ব্বর হুণ পরশু হস্তে স্থির হইয়া দাড়াইল । তাহারা বিস্ময়স্তিমিত-নেত্ৰে শুভ্র অশ্বপৃষ্ঠে শ্বেতবৰ্ম্মাবৃত পলিতকেশ, মাগধবীরের দিকে চাহিয়া দেখিল, পরক্ষণেই ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হইল। সঙ্কীর্ণ পাৰ্ব্বতাপথ মানব ও অশ্বের মৃতদেহে রুদ্ধ হইল। বৃদ্ধ অশ্ব পরিত্যাগ করিয়া সেই রক্তমাংসনিৰ্ম্মিত প্রাচীরের উপরে উঠিয়া দাড়াইলেন, মাত্র চারিজন মাগধসেনা তাহার রক্ষার্থ অগ্রসর হইল। শত শত শর, পরশু ও ভল্ল সেই পঞ্চজনকে মহাপ্রস্থানের পথে সুসর্গর করিয়া দিল। মাগধ মেধ, মাগধ-অস্থি, মাগধ-বসানিৰ্ম্মিত প্রাচীরের উপর মাগধ-বীর মহাবলাধিকৃত মহানায়ক অগ্নি গুপ্ত মাগধ-সাম্রাজ্যের তোরণ রক্ষার্থ চির-বিশ্রাম লাভ করিলেন ।
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।