একাদশ পরিচ্ছেদ রাজপথে শোণ্ডিকবীথিতে বৃদ্ধ অক্ষয়নাগ বিপণীর সম্মুখে বসিয়া ধিমাইতে ছিল। অষ্ঠ শোণ্ডিকবাগি জনশূন্য, পাটলিপুত্রের প্রশস্ত ৰাজপথ জনশূন্ত । সন্ধা আগত তথাপি বিশাল নগরী অন্ধকার । স্থানে স্থানে নাগরিকগণ একত্র হইয়া মূঢ়স্বরে বাক্যালাপ করিতেছে। সকলেরই মুখে এক কথা— অনন্তা আসিয়াছে, পটমহাদেবী আত্মহত্যা করিয়াছেন, কল্য ইন্দ্রলেখা আসিবে । রজনীর প্রথম যাম অতীত শুইলে মশক দংশনে অস্থির হইয়া বৃদ্ধ শোণ্ডিক বিপণী পরিত্যাগ করিল এবং শোণ্ডিকবীথির শেষভাগে রাজপথের সম্মুখে গিয়া দাড়াইল । উভয় পথের সন্ধিস্থলে কতিপয় যুবক দাড়াইয়াছিল। তাহাদিগের সকলেই পরিচিত দেখিয়া অক্ষয়নাগ তাহাদিগের নিকট সরিয়া গেল এবং জিজ্ঞাসা করিল, “কি হে জনাৰ্দ্দন ! এ বৎসর কি দুই দিন শিবচতুর্দশী হইয়াছে ?” জনাৰ্দ্দন বিষণ্ণবদনে কহিল, “আর দাদা, কল্য ইন্দ্রলেখা আসিবে, হয় ত অনন্তাই পট্টনহাদেবী হুইবে, অনেকের মস্তক স্কন্ধচু্যত হইবে।—সকলেই সেই ভয়ে অস্থির, সুতরাং ক্রয়বিক্রয় একবারেই বন্ধ।” - “দেখ জনাৰ্দ্দন, তোমরা বিষম ভুল করিতেছ। যতক্ষণ পিতৃদত্ত মস্তকটা স্কন্ধে সংলগ্ন আছে, ততক্ষণ আনন্দ কর । অনন্ত আবার আসিয়াছে, পট্টমহাদেবী স্বর্গে -গিয়াছেন, সুতরাং যাহা হইবার তাহা হইবে । নিরর্থক আত্মপ্লানি ভোগ করিতেছ কেন, তাহাতে কি মস্তক স্কন্ধে সংলগ্ন থাকিবে ?”
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৭৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।