২৩০ করুণা কৌতুকপরায়ণার চঞ্চল অঙ্গে নুপুর কিঙ্কিনিবলয় বাজিয়া উঠিল না। করুণার উদ্দেশে কাতরকণ্ঠের করুণ আহবান উচ্চ হইতে উচ্চতর মাত্রায় উচ্চারিত হইল, তাহ সুদূর হণশিবিরে হতচেতন করুণার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল কি না তাহ অন্তর্যামীই জানেন । সহসা দ্রুতপদে ভানুমিত্র পাশ্বস্থিত কক্ষে প্রবেশ করিলেন, তাহার মনে হইল কবাটের পাশ্বে চম্পকবরণীর শুভ্ৰ বসনাঞ্চল ক্ষিপ্রগতিতে সরিয়া গেল কক্ষ হইতে কক্ষান্তরে, জনশূন্ত অট্টালিকার চারিদিকে ভানুমিত্র ক্ষিপ্তের ন্যায় করুণার ছায়ামূৰ্ত্তির অনুসরণ করিতে লাগিলেন। তাহাকে নিরস্ত করিতে না পারিয়া বিষণ্ণবদনে স্কন্দ গুপ্ত ও তাঙ্গর অনুগামী হইলেন । সেই সময়ে ক্লান্ত, পথশ্রান্ত শত শত মাগধসেনা অট্টালিকার সম্মুখে সমবেত হইতেছিল, তাহাদিগের বন্ম ও অস্ত্রশস্ত্রের শব্দ উদভ্ৰাস্তচিত্ত ভালুমিত্রের নিকট নুপুরবলয়-নিক্কণবং প্রতীয়মান হইতেছিল। অট্টালিকার তোরণে বন্ধুবৰ্ম্ম, চক্রপালিত ও কুমার হর্ষগুপ্ত অশ্বপৃষ্ঠ হইতে অবতরণ করিলেন। লৌহবৰ্ম্মে অসির আঘাত লাগিয়া যে শব্দ উৎপন্ন হইল, তাহা করুণার অঙ্গের অলঙ্কার-ঝঙ্কারের দ্যায় ভালুমিত্রের কর্ণে প্রবেশ করিল। তিনি বিদ্যুদ্বেগে দ্বিতলের সম্মুখের প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিয়া ভগ্নকণ্ঠে ডাকিলেন, "করুণ – এইবার ধরিয়াছি—করুণ—আর না— করুণ-বহুদিন দেখি নাই—করু—” অস্তাচলগামী সুর্যকিরণ মাগধ সেনার বৰ্ম্মে প্রতিফলিত হইল, তাহাদিগকে দেখিয়া ভানুমিত্র নিমেষের তরে স্থির হইয়া দাড়াইলেন । বেদনাকাতর গৌড়ীয় মহাবলাধিকৃতের অবস্থা দেখিয়া মাগধ-সেনা মস্তক অবনত করিল। তাহার কাতরকণ্ঠে উচ্চারিত করুণার আহবানধ্বনি শুনিয়াছিল, অনেকে সম্রাটের পালিত কল্প ও মহাবীর গৌড়ীয় বলাধিকৃতের পত্নীকে চিনিত । তাহারা জানিত যে, স্বামী-বিরহ-ভীতা করুণা স্বেচ্ছায় পাটলিপুত্র পরিত্যাগ করিয়া পুরুষপুরে আসিয়াছিলেন । পুরুষপুর
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।