সপ্তম পরিচ্ছেদ ২৩৭ চারিদিকে অগ্নিশিখা আকাশ স্পর্শ করিল। বৃদ্ধ কুণপুরোহিত দেবীকে ভক্তিভরে মাতৃসম্বোধন করিল, তখন দেবীর নয়ন হইতে অগ্নিশিখা ছুটিতেছিল, তাহা দেখিয়া ভয়ে বিংশতিহস্ত দূরে থাকিয়া নতজানু হুণরাজ তাহাকে মা বলিয়া ডাকি ল – হর্ষ । কি বলিলে মাতা, আবার বল--আবার বল— স্কন্দ । মাতা, তুমি তখন কোথায় ছিলে ? বুদ্ধা । দেব, যুবতী নাতিনীকে হুণগণ ধরিয়া লইয়া গিয়াছিল, জীবনের মায় ত্যাগ করিয়া নগরকেন্দ্রের প্রান্তরে লতাগুল্ম মধ্যে লুক্কায়িত থাকিয়া তাহার উদ্ধারের চেষ্টা করিতেছিলাম । তাহার পরে দেবীর জালাময়ী দৃষ্টি সহ করিতে না পারিয়া দলে দলে হ্ণনায়কগণ আসিয়া তাহাকে মাতৃসম্বোধন করিল, বৃদ্ধ হ্রণপুরোহিত কহিল, তাহারা পুরুষপরম্পরাক্রমে দেবীর আবির্ভাবের প্রতীক্ষা করিতেছে। তদবধি দেবী তৃণদেবীরূপে পরিচিত । স্কন্দ । মাতা, তোমার নাতিনীকে ফিরিয়া পাইয়াছ ? বুদ্ধা । দেবীর আদেশে পুরুষপুরের সকল রমণী বন্ধনমুক্ত হইয়াছে । বন্ধু। দেবী কোথায় ? বৃদ্ধা । সোণার রথে চড়াইয়া, পুষ্প চন্দন দিয়া পূজা করিতে করিতে হুণরাজ তাহাকে তক্ষশিলায় লইয়া গিয়াছে। স্কন্দ। তবে সত্য সত্যই করুণ মরে নাই ? সহসা যুবরাজের পশ্চাতে কক্ষের রুদ্ধদ্বার মুক্ত হইল, আবেগরুদ্ধকণ্ঠে একজন বলিয়া উঠিল, “না, মরে নাই, আমি মিথ্যা কহি নাই। স্কন্দ, সে বলিয়াছিল মরিবে না, মরিতে পারিবে না, যখন হউক, যেখানে হউক, আবার ফিরিয়া আসিবে উঠ, চল, পুরুষপুরে আর না । তক্ষশিলা, জালন্ধর যেখানে করুণা আছে, সেইখানে চল ।” যুবরাজ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় উঠিয়া কহিলেন, “চল ।”
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।