○○や করুণা নাগরিক ও সৈনিকগণ সসন্ত্রমে পথ ছাড়িয়া দিতেছিল । দুই একজন বুদ্ধসেনা সসম্মানে অভিবাদন করিতেছিল, যুবা তাহাদিগের দিকে দকপাত না করিয়া আপন মনে বলিয়া যাইতেছিল, “উৎসব কর, কিন্তু গঙ্গাদ্ধারে যাইতে ভুলিও না, আজি গঙ্গাদ্ধারে সম্রাটের বিবাহ । বহু যত্নে কুমার হর্য গুপ্ত পট্টমহাদেবীকে নগরে ফিরাইয়া আনিয়াছেন, গঙ্গাদ্ধারে শুষ্ক সৈকতের সিংহাসনে বিচলিত কুললক্ষ্মী পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হইবেন । নাগরিকগণ, আজি আঙ্গর ভুলিও, বিলাস ভুলিও, কিন্তু গঙ্গাদ্ধারে যাইতে ভুলিও না।” দেখিতে দেখিতে অসংখ্য নরনারা প্রাসাদের গঙ্গাদ্বারের সম্মুখে বিস্তৃত শুভ্ৰবাসুকাক্ষেত্রে সমবেত হইল ; নগর তোরণে, প্রাসাদ-তোরণে, মন্দিরে মন্দিরে দ্বিতীয় প্রহরের মঙ্গলবাদ্য বাজিয়া উঠিল, তখন ভীষণ শব্দে গঙ্গাদ্বারের লোহময় কবাট মুক্ত হইল। নগ্নশর্ষ নগ্নপদ শুভ্ৰবসন-পরিচিত কুমার হর্ষগুপ্ত সুবর্ণাধার মস্তকে লইয়া তোরণপথে নিস্ত্রশস্ত হইলেন । তাহার পশ্চাতে মহারাজাধিরাজ স্বয়ং মহারাজপুত্র গোবিন্দ গুপ্ত, মহামাতা দামোদর শম্মী, বৃদ্ধ মহাদণ্ডনায়ক রামগুপ্ত, প্রাচীন মহাপ্রতীহার কৃষ্ণগুপ্ত, যুবরাজভট্টারকপাদীয় মহানায়ক জয়ধবল, বন্ধুবৰ্ম্ম, চক্রপালিত প্রমুখ সাম্রাজ্যের অভিজাত-সম্প্রদায়ের প্রধানগণ জাহ্নবীতীরে আসিলেন । হেমন্তের জাহ্নবীর ক্ষীণরেক্ষা যেখানে শুভ্র সৈকতের প্রান্ত চুম্বন করিতেছে, হর্ষগুপ্ত সেইস্থানে আসিয়া দাড়াইলেন, শুষ্ককণ্ঠে স্কন্দ গুপ্ত জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভাই, কি বলিবে বল ?” হর্ষগুপ্ত কহিলেন, “মহারাজাধিরাজ, পবিত্র প্রতিষ্ঠানপুরে কালিন্দীমুরধুনী-সঙ্গমে আমাকে আদেশ করিয়াছিলেন, যেদিন আপনি পাটলিপুত্রে পদার্পণ করিবেন, সেইদিন সাম্রাজ্যের পট্টমহাদেবীকে লইয়া পুরদ্বারে উপস্থিত থাকিব। মহারাজাধিরাজ, পরমেশ্বরী পরমবৈষ্ণবী পরমমাহেশ্বরী পরমভট্টারিক পট্টমহাদেবী আপনার সম্মুখে উপস্থিত।” - ।
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৩৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।