やさ করুণা মহল্লিকার হস্তে ব্রাহ্মণকে সমর্পণ করিয়া কৃষ্ণ গুপ্ত প্রত্যাগমন করিলেন । অন্তঃপুরে একটি কক্ষমধ্যে সম্রাট কুমারগুপ্ত, মহারাজপুত্র গোবিন্দগুপ্ত, পট্টমহাদেবী, করুণদেবী, অরুণাদেবী, যুবরাজ স্কন্দগুপ্ত ও কুমার হর্যগুপ্ত উপবিষ্ট ছিলেন। মহল্লিক ঋষভদেবকে লইয়া সেই কক্ষে প্রবেশ করিল। করুণদেবী গৃহদ্বারে দাড়াইয়াছিলেন, তিনি ঋষভদেবকে দেখিয়া বলিয়া উঠিলেন, “ঠাকুর, তুমি আসিলে, এতক্ষণে বাচিলাম।” ব্রাহ্মণকে সকলে প্রণাম করিলেন, তাতার পরে একজন মহল্লিকা তাঙ্গকে কক্ষাস্তরে লইয়া গিয়া বস্ত্র পরিবর্ভুদ করাইয়া আনিল ঋষভদেব হস্ত পদ প্রক্ষালন করিলেন ও নুতন ক্ষৌমবস্ত্র পরিধান করিয়া যখন সেই কক্ষে পুনৰ্ব্বার প্রবেশ করিলেন, তখন কক্ষের সজ্জা পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে। বৃহৎ কক্ষের একপাশ্বে সম্রাটু, গোবিন্দগুপ্ত ও মহাদেবী উপবিষ্ট আছেন, পশ্চাতে গবাক্ষের নিকটে স্কন্দ গুপ্ত ও হর্ষগুপ্ত দাড়াইয়া আছেন । কক্ষের মধ্যস্থলে একখানি কাশ্মীর দেশীয় আয়ন এবং তাহার চতুষ্পাশে বৃহদাকার সুবর্ণ ও রজতপাত্রে রাশি রাশি অন্ন ব্যঞ্জন সজ্জিত রহিয়াছে । খাদ্যসম্ভার দেখিয়া ব্রাহ্মণ স্তম্ভিত হইয়া দ্বারদেশে দাড়াইল, পরে মস্তকে হস্তাপণ করিয়া বসিয়া পড়িল। র্তাহার অবস্থা দেখিয়া সম্রাটু ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঠাকুর, কি হইয়াছে ?” ব্রাহ্মণ দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া কহিল, “মহারাজ, আজি আমার অদৃষ্টে আহার নাই।” গোবিন্দগুপ্ত জিজ্ঞাসা করিলেন “কেন ঠাকুর থান্ত ত প্রস্তুত, আহার হইবে না কেন ?” “মহাশয়, বিধাত নিতান্তই বিমুখ, এমন ভুরি-ভোজন রাজধানীর ফলাহার—তাহাও কিনা পরিত্যাগ করিতে হইল ! এখন আহারে বসিলে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ হইবে।” করুণাদেবী ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “ঠাকুর, তুমি কি বলিতেছ ? তোমার আহার হয় নাই বলিয়া মা এখনও আহার করেন নাই ।” ঋষভদেব ক্ষুন্ন মনে কহিলেন, “ঠাকুরাণি, গৌড়ীয় বিপ্ৰ-সমাজে ঋষভের
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।