br8 করুণা আসিয়া কহিল, “মহাশয়, অপরাধ গ্রহণ করিবেন না, আমি নানাবিধ দুশ্চিন্তায় প্রপীড়িত হইয়া দেবমন্দির লক্ষ্য করি নাই ।” “দুশ্চিন্তা কখনও তোমায় ত্যাগ করিবে না, সুতরাং সাবধান হও ” “কখনও ত্যাগ করিবে ন ?" "না, কলা তুমি মগধ ত্যাগ করিয়া পঞ্চনদে যাইবে।” “কলাই ?” “ই কলা মধ্যাঙ্গে । তোমার বয়স্তকে বলি ও যে যাত্রকালে রমণী সহযাত্রী হইলে বিষম বিপদগ্ৰস্ত হইবে।” “কাহাকে বলিব ?” “তোমার বন্ধু গৌড়ীয় বলাধিকৃত ভানুমিত্রকে ” “ভানুমিত্রও কি দেশ ছাড়িয়া যাইবে ?” “ভানুমিত্র কল্য যুবরাজ স্কন্দগুপ্তের সহিত পঞ্চনদ যাত্রা করিবে ।” “ভানুমিত্রও কি ফিরিবে না ?” “ফিরিবে ।” “আর তাহার পত্নী ?” “হা, কিন্তু বহুকাল পরে ” “যুবরাজ কোথায় যাইবেন ?” “তোমাদিগের সঠিত যবনের দেশে ” “তিনি ও কি ফিরিবেন না ?” “ফিরিবেন, একবার হাসিমুখে, পরে চিরকাল জীবন্মত হইয়৷ ” “আমরা সকলে কি এক সঙ্গে যাইব ?” “হঁ৷ ” কাপালিক এই সকল কথা শেষ করিয়া আসন ত্যাগ করিয়া উঠিলেন এবং দ্রুতপদে মন্দির ত্যাগ করিয়া প্রস্থান করিলেন। ব্রাহ্মণ তাঙ্গ লক্ষ্য করিল না, সে তখন শ্ৰাম মন্দিরমণ্ডপের পাষাণময় স্তম্ভ ধরিয়া শু্যামল গৌড়দেশের কথা চিন্তা করিতেছিল। কাপালিক প্রাঙ্গণ হইতে নিস্ক্রান্ত হইলে, জনৈক দণ্ডধর প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিয়া কিয়ৎক্ষণ ইতস্ততঃ ভ্রমণের পরে মগুপের স্তম্ভের পাশে ঋষভদেবকে দেখিতে পাইল, এবং নিকটে আসিয়া কহিল, “দেব, মহাকুমারপার্দীয় গৌড়দেশীয় মহাবলাধিকৃত শ্রীমৎ ভানুমিত্র দেব আপনাকে স্মরণ করিয়াছেন।” ব্রাহ্মণ ভাবিল কাপালিক তাহাকে কি বলিতেছিল, সে জিজ্ঞাসা করিল, “আমি কত দিন জীবিত থাকিব ?” উত্তর না পাইয়া ব্রাহ্মণ মণ্ডপের চারিদিকে সন্ধান করিল, পরে উন্মাদের স্তায় “কাপালিক, কাপালিক” বলিয়া চীৎকার করিতে করিতে মন্দির হইতে বাহির হইয়া গেল। তাহ দেখিয়া দণ্ডধরও পশ্চাদ্ধাবন করিল।
পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।