পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় অধ্যায়।
১৩

 যে সকল স্থান বর্তমান সময়ে শিয়ালদহ ও বউবাজার বলিয়া প্রসিদ্ধ, ঐ সমস্ত স্থান পর্যন্ত লবণ-জলের হ্রদটি বিস্তৃত ছিল। এই সকল ভৌতিক পদার্থ অপেক্ষা নানাপ্রকার জীবজন্তুও অল্প ভীতির কারণ ছিল না। বন্য শুকর, কুম্ভীর, হাঙ্গর, নানাজাতীয় সরীসৃপ ও ব্যাঘ্র বিস্তর ছিল।: তদ্ভিন্ন দস্যুতস্করের অত্যন্ত প্রাদুর্ভাব থাকায় ইতর প্রাণীর ন্যায় মনুষ্যও মনুষ্যের পরম শত্রু ছিল। এই সকল বিষম অসুবিধা সত্বেও কিজন্য জবচার্ণক সাহেব ইহাকে বাঙ্গালার প্রধান বাণিজ্যস্থানরূপে মনোনীত করিয়াছিলেন, তাহা এক্ষণে ভাবিতে গেলেও বিস্ময়াভিভূত হইতে হয়। উত্তরকালে ইহা বিশাল নগরে পরিণত হইয়া গৌরব-গরিমায় উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে, এইরূপ ভবিষ্যৎ, ভাবিয়া তিনি এই স্থানটা নির্বাচন করিয়াছিলেন, এই কথা বলিয়া তাহার দূরদর্শিতার প্রশংসা করিতে যাওয়া এক প্রকার বাতুলতা মাত্র; বরং ইহাতে এইরূপ অনুমান করাই অধিকতর সঙ্গত যে, যন্ত্র যেরূপ নিজে বোধশক্তিহীন হইয়া যন্ত্রীর পরিচালনা-কৌশলে তাহার ইচ্ছানুরূপ কার্য্যের সমাধা কবে, জবচার্ণকও সেইরূপ দুর্বোধ্য ঐশিক বিধানের পরিচালনাধীনে বোধশক্তিহীন যন্ত্রের ন্যায় সেই ইচ্ছাময়ের ইচ্ছাই পূর্ণ করিয়াছেন মাত্র। তাহার এই নির্ব্বাচনের হেতু যাহাই হউক না কেন, ইহার উত্তরকালীন পরিণাম তাঁহার সুবুদ্ধিই পরিচয় দিতেছে। সুতরাং আজ তাহাকে “সুপ্রসিদ্ধ জবচার্ণক,—প্রাচ্য ভূখণ্ডে ইংরেজদিগের মধ্যে প্রথম খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি” এইরূপ বলিয়া বর্ণনা করা নিতান্ত অসঙ্গত।

 তিনটি মৃত্তিকাময় গ্রাম (দিল্লী কলিকাতা, গোবিন্দপুর ও সূতামুটি) হইতে বর্ত্তমান কলিকাতা উৎপন্ন হইয়াছে। ১৭৫২ খৃষ্টাব্দে