ভাবী ঘটনাবলী পূর্ব্বাহ্নেই আপনাদের ছায়া নিক্ষেপ করিয়া থাকে। ঐ সমস্ত ছায়া হইতে বিচার করিয়া দেখিলে, যে সকল ইতোমধ্যেই প্রকাশ পাইয়াছে, সেগুলি বস্তুতই অত্যন্ত ভীতিজনক। তাহাতে উন্নতির আভাস কিছুই পাওয়া যায় না। একটা ইংরেজী প্রবাদবাক্য আছে,—চকচক করিলেই সোণা হয় না। এই বাক্যটি বর্তমান হিন্দুসমাজ সম্বন্ধে বেশ খাটে। আরামদায়ক বর্তমান অবস্থা আপাত-মনোরম ও সুখকর বোধ হইতে পারে, কিন্তু ইহার ভাবী ফল শুভজনক হইবে না। সমাজের বর্তমান অবস্থার গুরুতর ভাব সকলেরই হৃদয়ঙ্গম করা কর্তব্য। পাশ্চাত্য দেশের তথাকথিত উৎকৃষ্ট সভ্যতার আড়ম্বর ও প্রখর দীপ্তি আমাদের নয়নকে এমন অন্ধ করিয়া ফেলিয়াছে এবং মনোহর বর্তমান ভাবে আমরা এতদূর বিমুগ্ধ হইয়া পড়িয়াছি যে, আমাদের সামাজিক জীবনের যাবতীয় গুরুতর প্রশ্নই আমরা নিতান্তু তাচ্ছীল্যের সহিত মীমাংসা করিয়া ফেলি। হিন্দুসমাজ যে উত্তরোত্তর ভাঙ্গিয়া যাইতেছে, সে বিষয়ে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। দিন দিন ইহার সংগঠন প্রবল ধাক্কা খাইতেছে। যে বিষম ঝঞ্ঝাবাতে ইহা পর্য্যুদস্ত হইবার সম্ভাবনা হইয়া উঠিয়াছে, তাহা কাটাইয়া উঠিতে পারিবে কি না, সে বিষয়ে ঘোর সন্দেহ। আমাদের পশ্চাদ্ভাগে নীরবে এক বিষম বিপ্লব চলিতেছে, এবং অতি পুরাকালে যাহা কিছু সংগঠিত ও যুগে যুগে দৃঢ়ীভূত হইয়াছে, এই বিষম বিপ্লবের প্রবল স্রোতে তাহা ভাঙ্গিয়া যাইবার উপক্রম হইয়াছে। এই বিপ্লবের প্রকৃতি এবং ইহার অন্তর্নিহিত দার্শনিক তত্ব পরীক্ষা করিয়া দেখা যাক। এক কথায় বলিতে হইলে, ইহাকে অরাজকতা বলা যাইতে পারে, এবং ইহার অবশ্যম্ভাবী ফল বিনাশ।
পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ অধ্যায়।
৩৩৫