পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
কলিকাতার ইতিহাস।

—যাহা অসামান্য লোমহর্ষণ নিষ্ঠুরতার জন্য, তাহার যথোপযুক্ত ভীষণ প্রায়শ্চিত্তর নিমিত্ত চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। ইংরেজবন্দিগণ প্রহরীদিগের কৃপার হস্তে পরিত্যক্ত হইল, অর প্রহরীরা স্থির করিল যে, তাহারা বন্দীদিগকে সে রাত্রির মত দুর্গের কারাকক্ষে আবদ্ধ করিয়া রাখিবে—সেই কক্ষটি অন্ধকূপরূপ ভীষণ নামে পরিচিত। সেই কারাকক্ষটি এরূপ সঙ্কীর্ণ ও বায়ুসমাগমশুন্য ছিল যে, এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কেবলমাত্র একজন ইউরোপীয়ের পক্ষেও উহা অসহ্য হইত। উহার আয়তন দৈর্ঘ্যে ও বিস্তারে ২০ ফুট মাত্র। বায়ুপ্রবেশের নিমিত্ত যে কয়েকটি গবাক্ষ-ছিদ্র ছিল, সেগুলি অতি ক্ষুদ্র ও ব্যাহত। তখন অত্যন্ত গ্রীষ্ম,—ওরূপ সময়ে সমুচ্চ গবাক্ষ ছিদ্র ও তালবৃন্তের অনুক্ষণ বায়ুসঞ্চালন সত্ত্বেও বাঙ্গালার প্রচণ্ড গ্রীষ্ম ইংল্যাণ্ডবাসীদিগের পক্ষে এক প্রকার অসহ্যই বলিতে হইবে। বন্দীরা সংখ্যায় ১৪৬ জন ছিল। যখন তাহাদিগকে ঐ কারাকক্ষে প্রবেশ করিতে হয়, তখন তাহারা প্রথমে মনে করিয়াছিল যে, নবাবের সৈন্যেরা তামাসা করিতেছে; আর ইতঃপূর্ব্বে নবাব তাহাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করিবেন না বলিয়া প্রতিজ্ঞা করায় তাহারা সাতিশয় প্রফুল্লচিত্ত ছিল, এজন্য তাহারা এরূপ অসঙ্গত প্রস্তাবে হাস্য ও ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করিতে লাগিল। কিন্তু অচিরেই তাহারা আপনাদের ভ্রম বুঝিতে পারিল। তাহারা প্রতিবাদ করিল —তাহারা অনুনয় বিনয় করিল—কিন্তু সমস্তই বিফল হইল!! প্রহরীরা এই বলিয়া ভয় দেখাইল যে, যে কেহ ইতস্ততঃ করিবে, তাহাকেই কাটিয়া ফেলা হইবে। বন্দিগণ তরবারির মুখে সেই কারাকক্ষমধ্যে তাড়িত হইল এবং অবিলম্বে তাহার দ্বার রুদ্ধ করিয়া তালাচাবি দিয়া বন্ধ করা হইল!!!