বড়ই কৌতুকের বিষয় এই যে, আজিকালি এমত এক শ্রেণীর কতকগুলি লেখক অভ্যুদিত হইয়াছেন যে, তাহারা অন্ধকূপহত্যার ব্যাপারটা একেবারে উড়াইয়া দিতে চাহেন। তাহারা প্রকারান্তরে এরূপ কথা বলিতেও কুণ্ঠিত নহেন যে, হলওয়েল সাহেব আপনাকে অন্ধকূপহত্যা ব্যাপারের একজন উত্তরজীবী বণিয়া জনসমাজে প্রচার করিয়া ছিল, এই ঘটনার কথাটা সেই হলওয়েলের কপোল-কল্পনা ব্যতীত আর কিছুই নহে। এই সকল লেখক তাদের উক্তির সমর্থনার্থ যে সকল যুক্তির অবতরণ করিয়াছেন, তাহা নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর। তাহারা বলেন যে, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ২০ ফুট একটা ঘরে ১৪৬ জন লোক কখনও ধরিতে পারে না, সুতরাং এই ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য নহে। যে গল্প শ্রবণমাত্রে সহজেই অতীব লোমহর্ষণ ও বীভৎস বলিয়া প্রতীয়মান হয়, সেরূপ একটা মিথ্যা গল্প হলওয়েল সাহেব কি উদ্দেশ্যে রচনা করিলেন, সে বিষয়ের বিচার করিবার কোনরূপ চেষ্টা এই সকল লেখক করেন নাই। তাঁহারা এমন কথাও বলেন যে, নবাব সিরাজুদ্দৌলা একজন সবলবুদ্ধি, নিরীহ ও অনভিজ্ঞ যুবক ছিলেন, এবং মোটের উপর বড় অপকৃষ্ট শ্রেনীর
তারিখে বাঙ্গালার রেভিনিউ কাউন্সিলে যে দরখাস্ত করেন, তাহাতে এইরূপ বলিয়াছিলেন:—
“কলিকাতার অধিকার ও তৎপরে সিরাজুদ্দৌলার যে পরাজয় ব্যাপার সংঘটিত হয়, তাতে এ অধীন মাননীয় লর্ড ক্লাইভ (তৎকালে কর্ণেল ক্লাইভ) সাহেবের অধীনে অনেক কাজ করিয়াছিল; সে সময়ে আবেদনকারী (অর্থাৎ নবকৃষ্ণ) এস মুন্সি ও অনুবাদকরূপে কার্য্য করিয়াছিল এবং যাবতীয় অতি গোপনীয় কর্ম্মে নিযুক্ত হইয়াছিল।
নবকৃষ্ণ ১৭৬৭ সালের ১৬ই মার্চ তারিখে মাননীয় হ্যারি কোয়েলেষ্টের নিকট যে আবেদন করেন, তাহাতেও তিনি এ বিষয়ের উল্লেখ করিয়াছিলেন।