মানবগণ বিশৃঙ্খলভাবে একত্র মিশ্রিত বা পুঞ্জীভূত হইয়া অতি বীভৎস ও শোচনীয় দৃশ্য প্রদর্শন না করিয়াছিল। কার্য্যোপলক্ষেই হউক বা বায়ুসেবনার্থই হউক, যে কোন পথে বহির্গত হইয়া দেখিলেই অপ্রীতিকর ও হৃদয়বিদারক দৃশ্যসকল দৃষ্ট হইবে। মৃতদেহসমূহ যতই জীবিতদিগের ন্যক্কারজনক ও অনিষ্টকর হইয়া উঠিতে লাগিল, ততই সেই সকল শবদেহ দূরীকৃত করিবার নিমিত্ত প্রত্যহ শত শত লোকে ঐ কার্য্যে নিয়োজিত হইতে লাগিল। ঐ সমস্ত শবদেহের কোনওরূপ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা ধম্মানুষ্ঠান হইল না, কেবল গাড়ী গাড়ী বোঝাই দিয়া নদীতে ঝুপঝাপ ফেলিয়া দেওয়া হইতে লাগিল। এইরূপ ক্রমবর্দ্ধমান অশ্রুতপূর্ব্ব মড়কে, নগর ও নগরোপকণ্ঠ এরূপ কলুষিত হইয়া পড়িল যে, সর্ব্বসাধারণের মন এমন একটা গুরুতর আতঙ্কে উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিল যে, গ্রীষ্মের প্রচণ্ডউত্তাপ, অপ্রোথিত শবদেহসমূহ হইতে অনুক্ষণ উত্থিত দূষিত বাষ্পরাশি, এবং বায়ুর প্রখর উত্তপ্ত অবস্থার জন্য শীঘ্রই এক প্রকার ইনফ্লুয়েঞ্জা উদ্ভুত হইয়া দেশব্যাপী মড়ক আনয়ন করিবে। স্বর্গীয় স্যার উইলিয়ম হণ্টার লিখিয়াছেন:—“এই দুর্ভিক্ষের দুই বৎসর পরে ওয়ারেন্ হেষ্টিংস বঙ্গদেশের অবস্থা সম্বন্ধে একটি সুবিস্তৃত রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করেন। তিনি দেশের অনেক স্থানে ভ্রমণ করিয়াছিলেন। এবং পথে পথে এ বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করিয়াছিলেন। তৎপরে তিনি বহু বিচার বিতর্কের পর লিখিয়াছেন যে, এই দুর্ঘটনায় অন্ততঃ অধিবাসিবর্গের এক তৃতীয়াংশ পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়াছিল।”
পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় অধ্যায়।
৩৫