পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায়। ○○ বচি ও ইক্ষু পত্র পাওয়া গিয়াছে। ১৯৬ ফিটের নিম্নে—লৌহসংযুক্ত মৃত্তিকার চিহ্ন পাওয়া যায়। ৩৫০ ফিট নিম্নে, একটী কুকুরের কঙ্কাল—ও ৩৭২ ফিটের পর, একটা কচ্ছপের খোলা বাহির হইয়াছিল। ইহার পর আরও খনন করিতে করিতে, ঝিনুক, গলিত উদ্ভিজ্জ-সার ও গাছের গুড়ি দেখা গিয়াছিল। এইরূপ পদার্থ সমূহের আবির্ভাব দেখিয়া, কুপটকে ৪৮১ ফিটু পর্য্যন্ত খনন করান হয়। কিন্তু তাহার মধ্যে সমুদ্রতীরের ক্ষুদ্র বালুকা, পুৰ্ব্বত নঃস্থত ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড, অভ্রের খণ্ড বাহির হওয়ায় খনন কাৰ্য্য বন্ধ করা হয়। (৩) কয়েক বৎসর গত হইল, দমদমার নিকট একটী পুষ্করিণী খননকালে গভীর ভাবে খনিত একটী স্থান হইতে, ঐরূপ বৃক্ষ একটী হরিণের শৃঙ্গ ও কঙ্কাল বাহির হইয়াছিল। (৪) বর্তমান গার্ডেনরীচের নিকট এক পুষ্করিণী খননে একখানি নৌকা বাহির হয় । ইহা হইতে প্রমাণ হয়, গঙ্গার বদ্বীপ বা ( Gangetic Delta ) বহুবার বসিয়া গিয়া, এক্ষণে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হইয়াছে। ৬৩৫ খ্ৰীষ্টাব্দে, চীন পরিব্রাজক হিউয়েনসাং, তমলুক বা তাম্রলিপ্ত নগরীকে—সমূদ্র তটে দর্শন করিয়া গিয়াছিলেন। কিন্তু এখন তমলুক হইতে সাগর ৬০ মাইল দূরে চলি গিয়াছে। ধরিতে গেলে, প্রতি শতাব্দীতে প্রায় পাচ মাইল করিয়া ভূমি ভরিয়া উঠিতেছে। ইহা হইতে অনুমান করা যায়, মিহিরের “সমতট” ও কবিরামের “কিলকিলা” প্রদেশ, বহু বহু শতাব্দীর পর বর্তমান অবস্থায় উপস্থিত হইয়াছে। বঙ্গদেশের প্রাচীন কালের কোন ধারাবাহিক লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না। বিশেষতঃ, বঙ্গদেশের দুর্ভাগ্য এত বেশী, বহু শতাব্দী পূর্বের কথা দূরে থাক—একশত বৎসরের পূর্বের ঘটনারও কোন লিখিত বিবরণ নাই। এরূপ অবস্থায়—বঙ্গদেশের প্রাচীন ভূতত্ত্ব সম্বন্ধে, কোন ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া অতি দুর্ঘট ব্যাপার। মোটের উপর কথা হইতেছে এই—বর্তমান কলিকাতা নগরীর অধিকত স্থান ও সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গ, অতি পুরাকালে সমুদ্র-গর্তমধ্যে নিমজ্জিত ছিল। চর ও বালুকাস্তর দ্বারা কালধৰ্ম্মে, গভীর সমুদ্রতল হইতে যুগ যুগান্তর ধরিয়া, বিস্তৃত ভূখণ্ডের অস্তিত্ব জন্মিয়াছে। এই সমুদ্র-গর্তোখিত, দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যেই. কলিকাতার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। -