ভাষার নমনীয়তা । (প্রথম প্রস্তাব । ) বসন্ত কাল। পল্পৰুিত নিকুঞ্জ কাননে প্রকৃতি-দেবী ভুবনখানিকে হাসাইতেছেন। আবার কৌতুকপ্রিয় বনদেবতা যেন মনুষ্যনয়নের অগোচরে থাকিয়া রসপূর্ণ ভাবময় চক্ষে নিরীক্ষণ করিতে করিতে তুলিকাটা টানিতেছেন,—কেমন সুদৃশ্য বর্ণের বিচিত্ৰতা সম্পন্ন হইতেছে-দেখ! কোন খানে নীহারধোঁত শুভ্রপুপ, কোন খানে অলক্ত নিখুঁত রক্তপুপ চিত্র করিবার বর্ণ দিতেছে ; কোথাও অভিনব কিসলয় তুলীর কার্য্য সম্পন্ন করিবার জন্ম হয় অগ্রভাগ বাহির করিতেছে-স্বয়ং বনদেবতা চিত্ৰকৰী নিঃ হস্তে ধীরে ধীরে কেমন কোমল তুলিকায় বর্ণ ফলাইতেছেন, প্রতি অঙ্গে নব জীবনের সতেজ জ্যোতি ঢল ঢল করিতেছে,—তবু চিত্রাঙ্কের রেখাপাত হয় নাই,--কেবল জগৎ জুড়িয়া একটা শ্যামল সুন্দর ছায় পড়িয়াছে। চারিদিকে বসন্তের উৎসব,—মধুর কলরবে স্বভাবকে যেন জাগরিত করিয়া তুলিয়াছে। শুন দেখি, গাছের শাখায় ও কি ডাকিল –পাখীর রব ? তুমি মনে ভাবিতেছ, পার্থী বলিতেছে—“ বউ কথা কও ” । কিন্তু, পার্থীর কি বউ আছে,—তা সে কথা কবে ? টেকীর কচ কচি, মনে যা ভাব কাণে তাই শুনায়। পার্থীর বাকশক্তি নাই, সে আপন মনে নিজের বুলি বলিতেছে, - তুমি কিন্তু,—“ বউ কথা কও, ” “ বউ কথা কও ”—শুনিতেছ। অনেকগুলি পাখীর বুলি ঠিক মানুষের কথার সদৃশ। চাতকে পত্রা: | চ্ছাদিত বৃক্ষের উচ্চ ডালে বসিয়া ডাকে,—“ ফটক জল, ফটক জল ”। " আবার ষড়জসিদ্ধ পাপিয়া মুর তুলিয়া কেমন স্পষ্ট বলিতে থাকে-চোক্ গেল, চোক গেল।” পক্ষীর আকার অবয়ব,—ঠিক মানুষের মত না উক, যদি বানরেরও কিছু অনুরূপ হইত, তাহা হইলে শাশাস্ত্রের কল্যাণে অনেক গুলি পার্থীর সঙ্গে আমরা কুটুম্বিতা করিতে পারিতাম। পাখীগুলি বাঙ্গালা কথা কয়-“ চোক গেল ”—বলে, “ ফটাক জল ”—বলে,-“ বউ কথা ( ११ )
পাতা:কল্পদ্রুম তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।