বিশ্বপ্রকৃতি তার কাছে তাই ছিল নাকো সাবধানে,
ঘন ঘন তার ঘোমটা খসিত ভাবে ইঙ্গিতে গানে;
বাসরঘরের বাতায়ন যদি খুলিয়া যাইত কভু
দ্বারপাশে তারে বসিতে দেখিয়া রুধিয়া দিত না তবু―
যদি সে নিভৃত শয়নের পানে চাহিত নয়ন তুলি
শিয়রের দীপ নিবাইতে কেহ ছুঁড়িত না ফুলধূলি।
শশী যবে নিত নয়নে নয়নে কুমুদীর ভালোবাসা
এরে দেখি হেসে ভাবিত, এ লোক জানে না চোখের ভাষা।
নলিনী যখন খুলিত পরান চাহি তপনের পানে
ভাবিত, এ জন ফুলগন্ধের অর্থ কিছু না জানে।
তড়িৎ যখন চকিত নিমেষে পালাত চুমিয়া মেঘে
ভাবিত, এ খ্যাপা কেমনে বুঝিবে কী আছে অগ্নিবেগে!
সহকারশাখে কাঁপিতে কাঁপিতে ভাবিত মালতীলতা,
আমি জানি আর তরু জানে শুধু কলমর্মরকথা।
একদা ফাগুনে সন্ধ্যাসময়ে সূর্য নিতেছে ছুটি,
পূর্বগগনে পূর্ণিমাচাঁদ করিতেছে উঠি-উঠি,
কোনো পুরনারী তরু-আলবালে জল সেচিবার ভানে
ছল ক’রে শাখে আঁচল বাধায়ে ফিরে চায় পিছু-পানে;
কোনো সাহসিকা দুলিছে দোলায় হাসির বিজুলি হানি―
না চাহে নামিতে, না চাহে থামিতে, না মানে বিনয়বাণী;
কোনো মায়াবিনী মৃগশিশুটিরে তৃণ দেয় একমনে,
পাশে কে দাঁড়ায়ে চিনেও তাহারে চাহে না চোখের কোণে—
৭৮