পাতা:কাঙ্গাল হরিনাথ (দ্বিতীয় খণ্ড) - জলধর সেন.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুণাতীত শুদ্ধ সত্ত্বগুণে অর্থাৎ পরমার্থ সাধনভজনে কোন প্রকার শ্রেণীভেদ বা জাতিভেদ নাই। কেন না, যেহেতু জাতি থাকিলে তৎসঙ্গে অহঙ্কার থাকিবেই থাকিবে। আবার, অহঙ্কার থাকিলে পরমাৰ্থ সাধন ভজন হইতে পারে না। এই কারণে বেদ, পুরাণ ও তন্ত্র পরমার্থ সাধন ভজনে কোন প্ৰকার শ্রেণীভেদ বা জাতি স্বীকার করেন নাই। মহানির্বাণ তন্ত্র তৃতীয় উল্লাসের ৯১৷৯২ শ্লোকে উক্ত হইয়াছে যে, “যদি নীচ জাতীয় লোকের অন্নও হয়, কিন্তু যদি তাহ ব্ৰহ্মসমৰ্পিত হয়, তাহা হইলে বেদান্তে পারদর্শী ব্ৰাহ্মণেও সেই অন্ন গ্ৰহণ করিতে পরিবে। পরব্ৰহ্মের মহাপ্ৰসাদ ভক্ষণের সময় জাতিভেদ বিচার করিবে না । যিনি এই মহাপ্ৰসাদ ( নীচ জাতির স্পর্শে), অশুদ্ধ বোধ করিবেন, তিনি মহাপাতকী হইবেন।” তবে সামাজিক ধৰ্ম্মে তাহা স্বীকার ও তাহার শাসনবাক্যও লিপিবদ্ধ করিয়াছেন ; অর্থাৎ যেখানে সত্ত্বগুণের প্রাধান্য নাই, রজঃ ও তমোগুণের সম্পূর্ণ প্রাধান্য, তথায় শ্রেণী বা জাতিভেদের যেমন প্রয়োজন, শাস্ত্ৰে তদ্রুপই ব্যবস্থাপিত হইয়াছে। উক্ত প্রকারের ব্যবস্থা সমাজনীতির যাদৃশী মঙ্গলদায়িনী, তাহার ব্যভিচার তাদৃশ অপকারক। ব্যভিচার প্রধানতঃ দুই প্রকার। প্ৰথম, পরমার্থ সাধন ভজনে জাতিভেদ। গুণানুসারে উন্নতি ও অবনতির স্রোত রুদ্ধই দ্বিতীয় ব্যভিচার মধ্যে গণ্য। তাহার পর কাঙ্গাল হরিনাথ বলিতেছেন, “গুণই শ্রেণী বা জাতিভেদের কারণ, এ কথা যদি বুঝিয়া থাক, তবে এখন একবার চিন্তা করিয়া দেখ, ব্ৰাহ্মণ কি ? যিনি গুণময় দেহে অবস্থান করিয়াও পদ্মপত্ৰস্থ জলের ন্যায় গুণাতীত, তিনি ব্ৰাহ্মণ। সুতরাং যে স্থলে গুণ নাই, সে স্থলে জাতিভেদ কিরূপে হইতে পারে ? অতএব, ব্ৰাহ্মণ কোন জাতি নহে।